অথবা, অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
উত্তরঃ ভূমিকা: সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতের বুকে বাংলা একটি পৃথক অস্তিত্বের অধিকারী। ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে বাংলা পৃথক সত্তার অধিকারী। তার এ নিজস্বতার কারণে সে কখনো অন্য কোনো শাসক বা অঞ্চল যারা বেশিদিন শাসিত হতে পারেনি।
ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করা হলে পরে ১৯১১ সালে রদ করা হয়, দেশ বিভাগের ক্রান্তিকালে আবার বাংলাকে বিভক্তির কথা উঠে আসলে বাংলার মানুষ আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস পায় এবং এ কারণে বসু সোহরাওয়ার্দী চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাকে পৃথক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। এ চুক্তিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১. বাংলা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে।
২. বাংলার জন্য নতুন মন্ত্রিসভা গঠন, সংবিধান তৈরি।
৩. মুসলমান ও হিন্দুদের সংখ্যানুপাতে আইনসভায় আসন ও শাসনকার্য পরিচালনা।
৪. চাকরিতে বাঙালিদের প্রাধান্য।
ব্যর্থতার কারণ:
১. সাংগঠনিক কারণ: এ প্রস্তাব উদ্যোগতাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল তারা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করে প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেনি।
২. বাংলার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দ্বন্দ্ব বাংলার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে অনৈক্য অখণ্ড বাংলা গড়ার
অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বাংলা বিভক্তির উপর গণভোটের আয়োজন করা হলে আন্দোলন সফল হতো। ৩. কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব কমিউনিস্ট পার্টি অখণ্ড বাংলার পক্ষে থাকলেও তারা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে।
৪. জনসংখ্যার বিভাজন: পশ্চিম বাংলায় হিন্দু এবং পূর্ব বাংলায় মুসলমান জনবসতি বেশি ছিল। ফলে হিন্দুদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ সৃষ্টি হয়। তারা কোলকাতার খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা নিজেরা একা ভোগ করতে চেয়েছিল।
৫. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: ৪০ এর পর থেকে মুসলমান ও হিন্দুদের দাঙ্গা বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগসস্ট ভয়াবহ দাঙ্গার পর মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
৬. বিলম্বিত প্রয়াস: এর ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে বলেন যে, এটি ছিল বিলম্বিত উদ্যোগ। বাংলার গভর্নরসহ এ প্রস্তাবের উদ্যোক্তা এ কথা প্রকাশ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
৭. কংগ্রেসের বিরোধিতা: কংগ্রেসের হাইকমান্ডের বিরোধিতা ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। জওহরলাল নেহেরু ও সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল এর তীব্র সমালোচনা করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও অখণ্ড বাংলা গঠন একটি মহান উদ্যোগ ছিল কিন্তু এসব কারণে এ উদ্যোগ সফল হয়নি এবং অচিরেই ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট বাংলা বিভক্ত হয়ে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা সৃষ্টি হয়।