অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

অথবা, অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে কী জান?

উত্তর: ভূমিকা: মূলত অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয় ১৯২০ সালের কলকাতা সম্মেলন ও নাগপুর সম্মেলনে। ১৯২০ সালের ৪ সেপ্টম্বর কলকাতার কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে। লালা লাজপৎ রাই এর সভ্যপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় গান্ধী খিলাফত ও পাঞ্জাবের অবিচারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন। মূলত প্রস্তাবের খসড়া ও স্বরাজ অর্জনকে অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য বলে বর্ণনা করা হয়নি। খিলাফত রাওলাটি আইন প্রত্যাখ্যান ও স্বরাজ লাভ ঐ তিনটি দাবি অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হিসেবে গৃহীত হয়।

অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য: ১৯২০ সালে ডিসেম্বর মাসে নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশন বসে। এ ঐতিহাসিক অধিবেশনে পুরনো মূল উদ্দেশ্যর বদলে নতুন মূল উদ্দেশ্য স্থির করা হয়। কংগ্রেসের উদ্দেশ্য এখন আর গণতান্ত্রিক উপায়ে লভ্য। সাম্রাজ্যের মধ্যে ঔপনিবেশিক স্বয়ত্তশাসন নয় এখন এর স্থান গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণ ও বৈধ উপায়ে স্বরাজ লাভ নাগপুরে অধিবেশনে গান্ধীজি ভারতের আসন্ন গণসংগ্রামের প্রতি দৃষ্টি রেখে ব্রিটিশ সরকারকে সর্তক করে দিয়ে বলেন, ব্রিটিশ সরকার জেনে রাখুক যে তারা যদি তাদের কৃত অবিচারের প্রতিকার না করে তবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ধ্বংস করে ফেলাই হবে প্রতিটি ভারতবাসীর অবশ্য কর্তব্য। গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাকে তারা চূড়ান্ত সংগ্রামের ইঙ্গিত বলে ধরে নেয়। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের মৌলিকতা ও আন্দোলনের আদর্শ হলো এতে হিংসার কোনো স্থান ছিল না।

প্রথমত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অসহযোগ সংকল্পে অবিচালিত থেকে প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করাই এ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য।

দ্বিতীয়ত, অহিংস অসহযোগ শুধু ব্যক্তিগতভাবেই নয় সুসংঘবদ্ধভাবে জনগণ পবিত্র বিদ্রোহের পথে অগ্রসর হবে। এটিও আন্দোলনের অপর উদ্দেশ্য ছিল। দ্যাহলিক ল্যাপিয়েরের মতে, গান্ধীজি জাতিকে সত্যাগ্রহের দুটি মূল লক্ষ্যের কথা স্মরণ করে দেন। প্রথমে লক্ষ্য ছিল স্বরাজ অর্জন। ব্রিটিশের শাসন থেকে মুক্তি। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল জাতিভেদের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ হরিজন ও গ্রাম উন্নয়নে আত্মনিয়োগ, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা কুটির শিল্প পূণঃপ্রবর্তন শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি কর্মসূচি।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, দ্যাহলিক ল্যাপিয়েরে বলেন যে, কেবল মাত্র বিদেশিদের হাত থেকে মুক্ত হলেই জাতি প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে না। হিন্দু স্বরাজ পুস্তিকায় তিনি বলেন যে, ইংরেজ চলে গেলে দেশের কিছু লোক ইংরেজদের মতই শাসন চালালো প্রকৃত স্বরাজ আসবে না। দেশের সকল শ্রেণির সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই হলো স্বরাজের অন্যতম লক্ষ্য। আত্মন্নোতি ও আত্মশক্তি গঠন স্বরাজের আদর্শ।