অথবা, অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের শুরু থেকে ভারতীয়রা বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তেমনি ১৮৮৫ সালে ভারতে সর্বভারতীয় কংগ্রেসে প্রতিষ্ঠা হলে ভারতীয়রা রাজনৈতিকভাবে একটু শক্তিশালী হয়। খিলাফত আন্দোলন নিয়ে মুসলমানরা ব্রিটিশ বিরোধী হলে হিন্দুরাও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার নিপীড়ন মূলক ভারত আইন পাস করলে ভারতীয় হিন্দুরা এক তীব্র আন্দোলনের ডাক দেন, সেটি অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত। নানা কারণে এ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এ আন্দোলন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হিসেবে একটি গুরুত্ব বহন করে।
অসহযোগ আন্দোলনের তাৎপর্য:
১. কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি : অসহযোগ আন্দোলনের ফলে কংগ্রেসের শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায় এবং একটি সুসংবদ্ধ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কংগ্রেস প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে এবং এর সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
২. হিন্দু ও মুসলমান সম্পর্ক: এ আন্দোলনের প্রথমদিকে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ ও আন্দোলন পরিচালনা করলেও পরিবর্তিত বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সংঘর্ষ হিন্দু ও মুসলমানদের ঐক্যবোধ সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়।
৩. ব্রিটিশ শাসক শ্রেণির সচেতনতা বোধ: এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসক শ্রেণির কানে পানি যায় অর্থাৎ তার শাসনকার্য পরিচালনা এবং নতুন আইন পাস ও দমন নিপীড়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে।
৪. নেতৃত্ব সৃষ্টি: অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে অনেক নেতার সৃষ্টি। অসহযোগ আন্দোলন যেমন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এছাড়াও আরো অনেক নেতার সূচনা হয় এ আন্দোলন থেকে এবং মহাত্মা গান্ধীও একজন আদর্শ নেতা হিসেবে পুরো বিশ্বে খেতাব অর্জন করে।
৫. রাজনৈতিক চেতনাবোধ জাগ্রত: অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসী নিরস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্ক সচেতন হয় এবং নিজেদের মধ্যে জাতীয়তা বোধ ও ঐক্যবোধের সৃষ্টি হয় এবং ব্রিটিশ সরকারের মুখোশ তাদের সামনে উন্মোচিত হয়।
৬. নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব: এ আন্দোলনের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে বিভেদ হওয়ার কংগ্রেস দুটি উপদলে বিভক্ত হয়ে যায় এবং চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহেরু প্রমুখ কংগ্রেসের নেতারা স্বরাজ পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে।
উপসংহার: পরিশেষের বলা যায় যে, অসহযোগ যে উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল তা ব্যর্থ হলেও এ আন্দোলন ভারতবাসীর মধ্যে চেতনবোধ জাগ্রত করেছিল এবং ব্রিটিশদের সতর্ক করেছিল এবং এইসব আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই এক সময় ভারত বিভক্তি হয় এবং ব্রিটিশরা এদেশ ছেড়ে চলে যায়। তাই ভারত বিভাগের ক্ষেত্র ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এইসব আন্দোলন যে মানুষকে প্রেরণা যুগিয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।