অসহযোগ আন্দোলনে কী কী কর্মসূচি ছিল?

অথবা, অসহযোগ আন্দোলনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়?

উত্তর: ভূমিকা: খিলাফত আন্দোলনের পাশাপাশি ব্রিটিশ ভারতে ১৯২০ সালে যে অপর একটি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তা হলো অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সিন্ধান্ত এক যুগান্তকারী ঘটনা। তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে উপমহাদেশে যেসব বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল। তন্মধ্যে অসহযোগ আন্দোলন ছিল অন্যতম।

অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ: ১৯২০ সালের ১ আগস্ট গান্ধীজি কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষিত হয়। এ আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল ব্যাপক।

গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ:

১. বিদেশি পণ্য বর্জন এবং স্বদেশী পণ্য ব্যবহার।

২. ভারতীয় সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করা।

৩. ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত সকল প্রকার সম্মানসূচক খেতাব পদবি বর্জন।

৪. স্কুল, কলেজ, আদালত সরকারি পরিষদ এবং সরকারি চাকরি বর্জন।

৫. সকল প্রকার কর প্রদান বন্ধ করা।

৬. পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করা।

৭. সকল কাউন্সিল নির্বাচন বর্জন করা।

৮. আইনজীবীদের আদালত বর্জন।

৯. এগুলো ছাড়াও গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল।

যেমন:

১. ব্রিটিশ আদালতের পরিবর্তে পঞ্চায়েত গড়ে তোলা।

২. চরকায় সুতা কাটার উৎসাহ প্রদান।

৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা।

এ আন্দোলন ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। মতিলাল নেহেরু, চিত্তরঞ্জন দাস, রাজেন্দ্র প্রসাদ, রাজ্য, গোপালচারী প্রমুখ আইনজীবীগণ তাদের আইন ব্যবসায় পরিত্যাগ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯২১ সালে ফাগী বিদ্যাপীঠ, বারানসী বিদ্যাপীঠ, বঙ্গীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে সর্বত্র এক অভূতপূর্ব উদ্দীপনা দেখা দেয়। ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস মুম্বাই ও কলকাতায় আসলে উভয় শহরে ধর্মঘট পালিত হয়।

এছাড়া কৃষকরা মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ও তমস্থকে ইউনিয়ন বোর্ড ও চৌকিদার কর দেয়া বন্ধ করে দেয়। ১৯২১ সালে ৩৯৬ টি ধর্মঘট হয় এবং এতে ৬ লক্ষ শ্রমিক অংশ নেয়। ১৯২০ সালে ইংরেজ মালিকানাধীন বাংলার পাটকলগুলোতে ১৩টি ধর্মঘট হয়। ১৯২১ সালে নভেম্বর মাসে ইংলান্ডের যুবরাজ ভারতে এলে ১৭ নভেম্বর ভারতের সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। বায়াইতে পুলিশের গুলিতে ৫৩ জন নিহত হয়। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আলী ভ্রাতৃদ্বয় মিলে বহু জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে আন্দোলনকারীদের উৎসাহিত করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসীর মধ্যে স্বদেশি চেতনা বৃদ্ধি ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ দ্রব্যসামগ্রী বর্জন এবং দেশীয় দ্রব্য ব্যবহারের উৎসাহ প্রদান করা হয়। এই আন্দোলন জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।