অথবা, অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে অনেক আন্দোলনের উত্থান হয়, তার মধ্যে মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলন এবং হিন্দুদের গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত ভারতীয় অহিংস গণআইন অমান্য আন্দোলনগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এ আন্দোলনের ইতিহাসে গান্ধী যুগ এ সূত্রপাত ঘটায়।
অসহযোগ আন্দোলন : ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রাওলাটি আইন পাস হলে ভারতের ভাইসরয় ও ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল গণআইন বলবৎ করে। এই আইন বলে ভারতবাসীর উপর দমনমূলক নানা বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়। এর পূর্বে হিন্দু মুসলিম উভয়ের ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন বাতিল করার জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। এরপর রাওলাট এ্যাকট আইনের প্রতিবাদে ১৩ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দেন। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের একতরফা ভারতীয় সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনেক । ভারতবাসীকে ক্ষুদ্ধ করেছিল। ১৯১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এবং বিহারের চম্পারন ও গুজরাটের খেদায় মহাত্মা গান্ধী দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে গণ-আইন অমান্য করে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সম্ভ্রম ও দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। মহাত্মা গান্ধীর এ আন্দোলনকে সাহায্য করেছিল রাজেন্দ্র প্রসাদ ও জওহরলাল নেহেরুর মতো একদল তরুণ ভারতীয় বিপ্লবী। এ আন্দোলনটির সামগ্রিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ন সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল। তিনিও গান্ধীজির অন্যতম সহসৈনিক পরিণত হন। এদিকে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাদে একটি নিরস্ত্র জমায়েতে রেজিন্যান্ড ভায়াবের নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালানো হলে শতাধিক মানুষ নিহত ও সহস্রাধিক আহত হন। মহিলা শিশু ও বৃদ্ধদের ছেড়ে দেওয়া হয় না। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ শুরু হলে ব্যাপক ধরপাকড় লাঠিচার্জ ও হত্যালীলা চালায় পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ শাসনে সর্বাপেক্ষা কুখ্যাত ঘটনা বলে বিবেচিত। গান্ধীজি ও তার সহযোগীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় ব্রিটিশ শক্তির সঙ্গে এবার সংঘাত অনিবার্য। তাই কংগ্রেসে এসব দাবি ও ব্রিটিশ সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদে যে আন্দোলনের ডাক দেন সেটিই অসহযোগ আন্দোলন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, এ আন্দোলনের প্রতিবাদ হিসেবে গান্ধীজি সকল অফিস ও কলকারখানা বন্ধের ঘোষণা দেন ভারতীয় সরকারি স্কুল পুলিশ বিভাগ সেনাবাহিনীও সরকারি চাকুরী ত্যাগে উৎসাহিত করা হতে থাকে এছাড়া গণপরিবহন ব্রিটিশ দ্রব্যসামগ্রী বিশেষত কাপড় বর্জিত হয়। যদিও এ আন্দোলন পরবর্তিতে ব্যর্থ হয় তথাপি ভারতীয় জনসাধারণের জন্য একটি সচেতনতাবোধ জাগ্রত করার আন্দোলন ছিল এটি।