অথবা, আইন কাকে বলে?
অথবা, আইন কী?
উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইনের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ ও রাষ্ট্রের সুষ্ঠু বিকাশ ও কার্যকলাপ কার্যকর করার জন্য আইনের প্রয়োজন অপরিহার্য। আইন ছাড়া সভ্য সমাজের কথা কল্পনাও করা যায় না। আইন হলো মানুষ, সমাজ তথা রাষ্ট্রের বিকাশের অন্যতম নিয়মনীতি। Prof. Laski আইনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, “Law is those rules of behaviour which secure the purpose of the society.”
আইন: সাধারণভাবে আইন বলতে রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক গৃহীত কতকগুলো নিয়মকানুনের সমষ্টিকে বুঝায়, যা দ্বারা রাষ্ট্রে বসবাসরত জনসাধারণের আচরণের নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং যা সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
শাব্দিক অর্থে, ‘আইন’ শব্দটি ফারসি শব্দ, ইংরেজিতে যাকে Law বলা হয়। এ Law শব্দটির উৎপত্তি টিউটনিক শব্দ Lag থেকে। Lag এর অর্থ হলো স্থির ও সমভাবে প্রযোজ্য। তাই বলা যায়, Law বা ‘আইন’ শব্দের উৎপত্তির ভিতরই এর চরিত্র নিহিত। এটা হলো এমন কতকগুলো নিয়মকানুন, যা সকলের জন্যই সমানভাবে প্রয়োগ করা যায়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে আইনের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:
অধ্যাপক গ্রিন (Green) আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, “আইন হলো এক ধরনের অধিকার ও বাধ্যবাধকতা, যা রাষ্ট্র বলবৎ করে।”
প্রখ্যাত আইন বিশারদ জন অস্টিন (John Austin) বলেছেন যে, “আইন হলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃক অধস্তনকে প্রদত্ত আদেশবিশেষ।”
অধ্যাপক হল্যান্ড (Holland) এর মতে, “আইন হলো মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রণ বিধি, যা সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলবৎ করা হয়।”
অধ্যাপক স্যামন্ড (Salmond) বলেছেন, ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠাকল্পে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রযুক্ত বিধিবিধানসমূহই আইন।”
এরিস্কাইন এর ভাষায়, “আইন হলো প্রজাদের জীবনযাপনের বিধি সংবলিত নীতিমালা, যা সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বলবৎকৃত হয়।”
আইন বিশারদ কীটন এর মতে, “আইন হলো এমন কতকগুলো আচরণবিধি, যা সার্বভৌম কর্তৃক প্রণীত এবং তাদের উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।”
অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettell) এর মতে, “রাষ্ট্র যেসব নিয়মকানুন সৃষ্টি করে, স্বীকার করে এবং বলবৎ করে তাই কেবল আইন বলে পরিগণিত হয়।”
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আইন হলো রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত জনসাধারচোর সামগ্রিক কল্যাণের জন্য অত্যাবশ্যক কতকগুলো বিধিবিধানের সমষ্টি, যা রাষ্ট্রের সকলের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।