অথবা, আইন স্বাধীনতার প্রতিবন্ধক কি না আলোচনা কর।
অথবা, তুমি কি মনে কর আইন কী স্বাধীনতার পরিপন্থি? যুক্তি দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা: আইন স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতাকে সকলের নিকট সমানভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। আইন না থাকলে দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তির স্বাধীনতা বিপন্ন হতো। আইন মানুষের আচার আচরণ ও কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বলে প্রত্যেকে নিজ নিজ গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে আইনের দ্বারা ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি কিংবা প্রতিবন্ধক নয়, স্বাধীনতার সংরক্ষক।
আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি কি না : আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি বা প্রতিবন্ধক কি না সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার জন্য নিম্নে কতকগুলো যুক্তি বা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হলো:
১. আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচ: কতিপয় ধূর্ত ও শক্তিশালী ব্যক্তির দ্বারা দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তির স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে। আইনের নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়। আইন মানুষের আচার আচরণের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। ফলে স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয়। এ অর্থে বলা যায়, আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি নয়, এরং রক্ষাকবচ।
২. আইন স্বাধীনতার অভিভাবক: আইন জনগণের স্বাধীনতার অভিভাবক হিসেবে কাজ করে এবং যে কোন ধরনের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করে থাকে। কেননা একমাত্র আইনই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে করে অন্য কেউ নয়। সুতরাং আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি নয় বরং এর অভিভাবক।
৩. স্বাধীনতা আইলের উপর নির্ভরশীল: রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত অধিকারের ভিত্তিতেই স্বাধীনতার সৃষ্টি হয়। আইনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র এ অধিকার স্বীকার ও সংরক্ষণ করে। সুতরাং স্বাধীনতা আইনের উপর নির্ভরশীল তবে পরিপন্থি নয়।
৪. আইন জনগণের আত্মবিকাশের সুযোগ দেয়: স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ অসম্ভব। কিন্তু এরূপ অধিকার ভোগ করতে হলে তা আইন দ্বারা স্বীকৃত ও সীমাবদ্ধ হতে হবে। কেননা আইনানুমোদিত স্বাধীনতা সুনির্দিষ্ট। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতাটুকু ব্যক্তিকে দেয়া হয়ে থাকে। তাই আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি নয়।
৫. আইন শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে : আইন সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করে। কেননা, সমাজের যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন অপরিহার্য। সুতরাং আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি নয়।
৬. আইন শাসক ও শোষকের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে: আইনের ভয়ে শাসক ও শোষক উভয়ই তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে। কেননা আইন সবার উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। আইন স্বেচ্ছাচারী শাসকের হাত থেকে সাধারণ জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করে থাকে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার বলা যায় যে, আইন স্বাধীনতার পরিপন্থি কিংবা প্রতিবন্ধক নয়, বরং আইন স্বাধীনতার সংরক্ষক। আইন না থাকলে জনগণ ও শাসক উভয়ই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠিত এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। ফলে জনগণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো। সুতরাং স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য আইন অপরিহার্য।