অথবা, আইয়ুব খানের শাসনামলে বাংলা ভাষার হরফ পরিবর্তন বিষয়ক ঘটনাটি
আলোকপাত কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে তার ক্ষমতাকে বৈধ করা ও যৌক্তিক হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তিনি সংস্কৃতিকে ইসলামি মেরুকরণ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আইয়ুব খান সরকার মনে করতো বাংলা ভাষা সংস্কৃতি ভাষা এবং এ ভাষা হিন্দুদের ভাষা। রোমান হরফে বাংলা পাঠদান চালু করতে হীন ষড়যন্ত্র শুরু করে আইয়ুব খান। নিচে আইয়ুব খানের শাসনামলে বাংলা ভাষার হরফ পরিবর্তন বিষয়ক পদক্ষেপটি বর্ণনা করা হলো:
বাংলা ভাষার হরফ পরিবর্তনের উদ্যোগ: আইয়ুব খান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমর্থক ছিলেন। তিনি বাঙালি জাতি
ও বাংলা ভাষা সংস্কৃতিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতেন। তিনি একদেশ এক ভাষা এক সংস্কৃতি গড়ে তোলার নামে বাংলা ভাষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেন। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভাষার সমন্বয়সাধন করার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষাকে রোমান হরফে পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য ১৯৫৯ সালে বাংলা একাডেমিকে ভাষা সংস্কারে নির্দেশ দেন। বাংলা একাডেমির পরিচালক সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে বাংলা ভাষা সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। আইয়ুব খান সরকার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংসের যে অপচেষ্টা গ্রহণ করেন তার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় ১৯৫৯ সালের ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১৯৫৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষা পরিবর্তনের এ ঘৃণ্য উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বাংলা ভাষাকে রোমান হরফে পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ান। শেষপর্যন্ত আইয়ুব খানের হরফ পরিবর্তন উদ্যোগ বানচাল হয়ে যায়।
আইয়ুব খান পাকিস্তানিদের জন্য বাংলা ভাষাকে ‘মুসলমানিত্ব’ প্রদান করার প্রয়োজন ছিল। ফলে বাংলা ভাষার হরফ পরিবর্তনকে তিনি যথার্থ বলে মনে করেছিলেন। আইয়ুব খান ও তার অনুসারীরা বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলে আখ্যায়িত করেন। এ সময় কিছু কবিতার লাইন ও জনপ্রিয় ছড়া পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। যেমন- ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’, এটিকে মুসলিম রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন। ‘ফভারে উঠিয়া আমি দিলে দিলে বলি, সারাদিন আমি যেন নেক হয়ে চলি।’ এছাড়া রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বলে উল্লেখ করে তার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে বাধা প্রদান করে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত আনতে শুরু করে। আইয়ুব খানও বাংলা ভাষাকে রোমান হরফে লেখার অপকৌশল গ্রহণ করেন। কিন্তু বাংলার জাগ্রত জনতা, শিক্ষিত সমাজ এ অপকৌশল ও ষড়যন্ত্র রুখে দেয়। ফলে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।