অথবা, আগরতলা মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।
অথবা, আপরতলা মামলার কারণ কী ছিল?
অথবা, আগরতলা মামলার বিষয়বস্তু কী ছিল?
উত্তরঃ ভূমিকা: বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর বাঙালি ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসকদের শোষণ থেকে মুক্তি লাভকরে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বাঙালি ইংরেজ শোষণের হাত থেকে মুক্তি লাভের পর পরই পাকিস্তানি শোষণের শিকার হয়। আর এ শোষণ প্রক্রিয়ার একটি অংশ ছিল আগরতলা মামলা।
আগরতলা মামলার প্রেক্ষাপট:
নিচে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে করা আগরতলা মামলার
প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো:
১. ভাষা আন্দোলন: ভাষা আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলনভিত্তিক সকল সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাই তিনি পাকিস্তানি শোষকদের রোষানলের শিকার হন। এ রোষানল এবং শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই তার বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়।
২. যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, গণতন্ত্রী দল ও নেজামে ইসলামের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। নির্বাচনে জনমত যুক্তফ্রন্টের পক্ষে গড়ে উঠার পিছনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক অগ্রগণ্য। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের রাজনীতি হতে মুসলিম লীগের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল। আর তাই মুসলিম লীগ সমর্থিত সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করেছিল।
৩. ১৯৬৬ সালের ছয়দফা : ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান স্বায়ত্তশাসনের দাবি সম্বলিত ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে এ দাবি উঠানোর কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়।
৪. ছয়দফা ডিতিক আন্দোলন : ছয়দফা উত্থাপিত হওয়ার পর পরই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই এ দাবির সমর্থনে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে এবং দ্রুত এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। জেনারেল আইয়ুব খান একে বিচ্ছিন্নতার লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও ছয়দফা ভিত্তিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে আগরতলা মামলা দায়ের করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা ও ছয়দফা ভিত্তিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই জেনারেল আইয়ুব খান আগরতলা মামলা দায়ের করেছিলেন।