অথবা, আগস্ট প্রস্তাবের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা : ১৯৪০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক মারাত্মক আকার ধারণ করে। জার্মানির অগ্রাভিযানের সম্মুখে বেশ কয়েকটি দেশের পতন ঘটতে পারে। যুদ্ধের এ ঢেউ ভারতের উপর এসে পড়ে। এমনি সময়ে ভারতে বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য ব্রিটিশ সরকার এক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতীয় জনমতকে কাজে লাগাবার কথা ব্রিটিশ সরকার ভাবতে লাগলেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৪০ সালের ৮ আগস্ট ব্রিটিশ সরকার ভারত সম্পর্কে তাদের নীতি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন। এটিই আগস্ট প্রস্তাব নামে খ্যাত।
আগস্ট প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া: ১৯৪০ সালের আগস্ট প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নিচে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হলো:
১. কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া: আগস্ট প্রস্তাবে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা স্বীকৃত না হওয়ায় কংগ্রেস আগস্ট প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। কংগ্রেস প্রতিরক্ষার উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে একট জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিল। এছাড়া সংখ্যালয় সম্প্রদায়ের প্রতি যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাতে কংগ্রেস মনে করে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে কার্যত জিন্নাহ ভেটো ক্ষমতা লাভকরেছে। গান্ধীজি আগস্ট প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বড়লাটকে লেখেন, “আমি সতর্কতার সাথে তোমার ঘোষণা পড়েছি এবং বিমর্ষ হয়েছি। এটা আমাকে দুঃখিত করেছে। এর উপলক্ষ আমাকে ভীত করেছে। কংগ্রেস এ প্রস্তাবের প্রতিবাদে ১৯৪০ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করে।”
২. মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়া: আগস্ট প্রস্তাবের পক্ষে মুসলিম লীগ মহলে অনুকূল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটি প্রস্তাবের ঐ অংশকে স্বাগত জানায় যে অংশটি কংগ্রেস কর্তৃক প্রত্যাখ্যান হয়। মুসলিম লীগের মতে, আগস্ট প্রস্তাব ব্যাখ্যাই দেয় যে, মুসলিম লীগের সম্মতি ও অনুমোদন ছাড়া ভবিষ্যতে যেন সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হবে না। মুসলিম লীগ এ অভিমত ব্যক্ত করে যে, ভারতের বর্তমান সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো ভারত বিভক্তি। কিন্তু এ সত্ত্বেও মুসলিম লীগ আগস্ট প্রস্তাবকে গ্রহণও করেনি। আবার প্রত্যাখ্যানও করেনি। এবং ব্রিটিশদের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় যোগদান হতে বিরত থাকে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আগস্ট প্রস্তাব দ্বারা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দাবির মধ্যে সমন্বয় সাধন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের নিকটও এটি গ্রহণযোগ্য হয়নি। তবে আগস্ট প্রস্তাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন নীতি দেখতে পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে ‘The Oxford History of India-তে বলা হয়েছে যে, “একটি ভারতীয় গণপরিষদই যুদ্ধ পরবর্তী সংবিধান রচনা করবে এবং এর সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে কার্যত পূর্বেই মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এরূপ পার্লামেন্ট ভারতের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার কার্যতঃ সমর্পণ করে, যে অধিকার এটি এ যাবৎ নিজের হাতে সংরক্ষণ করেছে।