অথবা, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও কৌশলগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচিসমূহ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ পুক্ষ্য শাসিত ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোঁড়ামি, সামাজিক, কুসংস্কার, নিপীড়ন ও জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৈষম্যের বেড়াজাল নারীদের সর্বদা রেখেছে অবদমিত। নারীর মেধা ও মননশীলতা ব্যয়িত হচ্ছে রান্না আর গৃহস্থালির কাজে। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা নারীকে সমাজ উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার পথে বাধার দেয়াল তুলে রেখেছে। সংবিধান নারীদের সমান অধিকারসহ নারী পুরুষ বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট নীতির অভাবে নারী উন্নয়নকে মূল ধারায় নেয়া সম্ভব হয়নি, এরই প্রেক্ষিতে বিদ্যমান-নারীপুরুষ ও ছেলে শিশু বৈষম্য রোধ করে মেয়ে শিশুদের সকল অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারীদের উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি।
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও কৌশল: নারী উন্নয়ন নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব সরকারের। একটি সুসংগঠিত ও সুবিন্যস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার মাধ্যমে এ দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে কর্মকাণ্ডে নারী উন্নয়ন প্রেক্ষিত অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রচেষ্টা নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় পর্যায়:
১. নারী উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো: নারীর সমতা, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় অবকাঠামো যেমন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জনবল ও সম্পদ নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাঠামো বিস্তৃত করা হবে।
২. জাতীয় মহিলা ও শিশু। উন্নয়ন পরিষদ (NCWCD): নারী উন্নয়ন নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ পরিষদের কার্যপরিধি নিম্নরূপঃ
(ক) আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণাপলয় বিভাগ
ও সংস্থার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও কার্যক্রম সমন্বয়সাধন।
(খ) শিশুর স্বার্থ ও/ অধিকার রক্ষা এবং শিশু কল্যঠনের নিমিত্তে সার্বিক নীতিনির্ধারণ ও অধিকার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন বোধে নতুন আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
(গ) নারী ও শিশুদের জন্য কর্ম-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
৩. সংসদীয় কমিটিঃ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক গঠিত নারী উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নারী উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করে নারীর অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারকে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগে গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করবে।
৪. নারী উন্নয়নে ফোকাল পয়েন্টঃ বিভিন্ন ফোকাল পয়েন্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির আলোকে কর্মসূচি গ্রহণ, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থায় নারী উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে যথাযথতাবে সম্পন্ন করা যায় জেন্য ঐ প্রতিষ্ঠানসমূহের ন্যূনতম পক্ষে যুগ্মসচিব/যুগাপ্রধান পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে ফোকালে পয়েন্ট হিসেবে মনোনীত করা হবে।
৫. নারী উন্নয়ন মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন কমিটিঃ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীকে সভা পতি এবং নারী উন্নয়নে চিহ্নিত ফোকাল পয়েন্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি ও বেসরকারি নারী উন্নয়নমূলক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নারী উন্নয়ন বাস্ত বায়ন ও মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি নারী উন্নয়ন সম্পর্কিত কর্মসূচি পর্যালোচন। সমন্বয় ও মূল্যায়ন করবে।
৬. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ঃ নারীর অগ্রগতি এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দপ্তর ও এনজিওদের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন ও নারী উন্নয়নে কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।
৭. তৃণমূল পর্যায়: তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম ও ইউনিয়নে নারীকে স্বাবলম্বী দল হিসেবে সংগঠিত করা হবে। এ দলসমূহকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার আওতায় নিবন্ধীকৃত সংগঠন হিসেবে রূপ দেয়া হবে। সরকারি, বেসরকারি উৎস, ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণ করে এ সংগঠনগুলোর সাথে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশসমূহের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ও সমন্বয় সাধন করা হবে।
৮. নারী উন্নয়নে এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে সহযোগিতাঃ গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে নারী উন্নয়নের সকল স্তরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সম্পৃত্তকরণ ও তাদের কর্মকাণ্ডের সাথে সমন্বয় সাধন করা হবে।
৯. নারী ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক গবেষণা: নারী ও সমতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। সকর গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নারী উন্নয়ন। ক্ষমতায়ন এবং নারী ও শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার উৎসাহিত করা হবে। পৃথক জেন্ডার গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।
১০. নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান: ঢাকায় বিদ্যমান নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণসহ বিভাগ, জেলা, উপজেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এসব কেন্দ্রে বিভিন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক, নারী অধিকার এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজের সকল স্তরে বিশেষভাবে প্রণীত এবং সুষ্ঠু অর্থায়নের ভিত্তিতে নারী বিষয়কে সংবেদনশীলকরণ কর্মসূচি নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, বিশেষত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও সকল উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।