আধুনিককালে প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার প্রযোজ্যতা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, আধুনিককালে প্লেটোর শিক্ষা ব্যবহা কতটুকু প্রয়োগযোগ্য?

অথবা, আধুনিককালে প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রযোজ্য কিনা উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: শিক্ষার অর্থ হচ্ছে আত্মাকে এমন এক পরিবেশে নিয়ে আসা, যার মাধ্যমে আত্মা স্তরে স্তরে সবচেয়ে ভালো উৎকর্ষ লাভ করতে পারে। প্লেটো নিজে শিক্ষাকে ‘The one great thing’ বলে অভিহিত করেন। তিনি মনে করেন, “শিক্ষাই মানুষের প্রকৃতিকে নিষ্ঠার সাথে পরিচালিত করে এবং এটা ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের চাবিকাঠি।”

আধুনিককালে প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার প্রযোজ্যতা: প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সমালোচনা সত্ত্বেও একথা বলা যায় যে, এটি একটি কালোত্তীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু তা আধুনিককালে রাষ্ট্রসমূহে সম্পূর্ণ প্রযোজ্য না হলেও আংশিকভাবে প্রযোজ্য। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে। যেখানে সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় তার শিক্ষাব্যবস্থা কতখানি প্রযোজ্য তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. প্লেটো শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সংগীত, ব্যায়াম ও শরীর চর্চার বিষয়কে প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আধুনিক যুগেও প্রায় প্রতিটি স্কুলে পরিলক্ষিত হয় এবং এটা রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২. তিনি পুরুষদের মতো নারীদেরও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন, যা বর্তমানকালে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

৩. তাঁর প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থায় জ্যোতিষবিদ্যা, দর্শন প্রভৃতি পাঠ্য বিষয়ের সাথে বর্তমান বিশ্ব একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

৪. উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। শিক্ষাই জ্ঞান সংযোজনের একমাত্র পন্থা। প্লেটোর এ ধারণা আজও যথাযথ মর্যাদার সাথে স্বীকৃত।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা যতই সমালোচনার সম্মুখীন হোক না কেন তৎকালীন মিসের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং আজকের যুগের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের নিয়ামক রূপে পরিগণিত হয়। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মানুষের আত্মিক উন্নয়নে প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা উৎকর্ষতার মুকুট। প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা মানবজীবনের ভ্রান্ত পথকে সংশোধন করে উত্তম, সুসংহত এবং বলিষ্ঠ জীবনের দিকনির্দেশনা করে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।