আধুনিক রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক বা গৌণ কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের চারটি ঐচ্ছিক কাজের বর্ণনা দাও।

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি বর্তমানে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচনার সুবিধার্থে – আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ১. অপরিহার্য কার্যাবলি ও ২. ঐচ্ছিক কার্যাবলি। নিম্নে রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-

ঐচ্ছিক বা গৌণ কার্যাবলি (Optional functions): একটি রাষ্ট্রের জন্য যেসব কার্যাবলি বাধ্যতামূলকভাবে করণীয় নয়, তবে সমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধনের জন্য করতে হয় সেগুলোকে ঐচ্ছিক কার্যাবলি বলে। নিম্নে রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. শিক্ষা সংক্রান্ত কাজ: ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।’ তাই রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ হলো শিক্ষামূলক কার্যাবদি সম্পাদন করা। আধুনিক রাষ্ট্রকে শিক্ষাবিস্তারের জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, চিকিৎসা, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্থাপন করতে হয়।

২. সামাজিক নিরাপত্তা বিধান: সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অপরিহার্য। রাষ্ট্র সামাজিক
নিরাপত্তা বিধানেও যথেষ্ট তৎপর থাকে। এজন্য রাষ্ট্র নাগরিকদের চাকরির ব্যবস্থা করে, বয়স্কদের বার্ধক্য ভাতা প্রদান ও
দরিদ্রদের সাহায্য করে থাকে।

৩. যোগাযোগ ব্যবহার উন্নয়ন সাধন: একটি দেশের উন্নয়ন এবং সভ্যতার মাপকাঠি হলো তার যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে যাতায়াত এবং যোগাযোগ যাতে দ্রুত ও আরামদায়ক হয় সেজন্য আধুনিক রাষ্ট্রগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাস্তা, পুল নির্মাণ, ডাক ও তার ব্যবস্থা স্থাপন ও পরিচালনার ‘ব্যবস্থা রাষ্ট্র করে থাকে।

৪. জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ: আধুনিক রাষ্ট্র জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হাসপাতাল, শিশুসদন, মাতৃসদন, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রভৃতি স্থাপন ও পরিচালনা করে থাকে। নাগরিকের সুস্বাস্থ্য রক্ষা রাষ্ট্রের একটি অন্যতম কাজ।

৫. শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজ: শিল্পায়ন ব্যতীত রাষ্ট্রের উন্নয়ন অসম্ভব। শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজে রাষ্ট্র সহায়তা করে থাকে। তাই নতুন নতুন শিল্প স্থাপন ও শিল্পপতিদের শিল্প স্থাপনে উৎসাহ প্রদান, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।

৬. শ্রমিক কল্যাণ: আধুনিক রাষ্ট্র শ্রমিকদের কল্যাণে নানাবিধ কাজ সম্পাদন করে। রাষ্ট্র শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বেতন, বাড়িভাড়া, ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করে।

৭. কৃষি উন্নয়নে: কৃষি তথা কৃষকদের উন্নয়নে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কৃষকদের পুনর্বাসনে রাষ্ট্র তাদেরকে ঋণ সহায়তা প্রদান, সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করে থাকে।

৮. জনহিতকর কাজ: আধুনিক রাষ্ট্র বহু জনহিতকর কার্যাবলি সম্পন্ন করে থাকে। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ, সেচ সহায়তা প্রদান, চিত্তবিনোদনের জন্য খেলার মাঠ প্রভৃতির ব্যবস্থা করে থাকে।

৯. বৃদ্ধ ভাতা ও পুনর্বাসন: আধুনিক রাষ্ট্র বয়স্কদের জন্য ভাতা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে, বৃদ্ধ বয়সে তারা যেন অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয় এ লক্ষ্যে রাষ্ট্র বৃদ্ধ ও পরিত্যক্তদের ভাতা প্রদান করে।

১০. বিবিধ: উল্লিখিত কার্যাবলি ছাড়াও আধুনিক রাষ্ট্র কতিপয় বিবিধ কাজ সম্পাদন করে থাকে। যেমন- দুস্থ নারীদের সেবার ব্যবস্থা, ভূমি সংস্কার, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ প্রভৃতি।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। তাছাড়া জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারতার সাথে সাথে মানুষের চিন্তাচেতনা ও ধ্যানধারণার ব্যাপক প্রসারতা ঘটেছে। যার ফলে আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধান করা যে হচ্ছে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।