আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি বর্ণনা কর।

অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের অপরিহার্য কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, তোমার মতে আধুনিক রাষ্ট্র কি কি কার্যাবলি সম্পাদন করে আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: রাষ্ট্র উৎপত্তি হয়ে বিভিন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। আগে ছিল নগর রাষ্ট্র এজন্য তার কার্যাবলিও ছিল ক্ষুদ্র পরিসরে। বর্তমানে রাষ্ট্র ধারণাটি অনেক ব্যাপক তাই এর কার্যাবলিও ব্যাপক পরিসরে।

আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি (Functions of the modern state): জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, “রাষ্ট্রের প্রকৃত কার্যাবলি সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট অভিমত জ্ঞাপন করা অসম্ভব। কারণ বিভিন্ন সামাজিক অবস্থায় তা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। সামগ্রিকভাবে জনকল্যাণই হলো রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।” তবে আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

ক. অপরিহার্য কার্যাবলি এবং খ. ঐচ্ছিক কার্যাবলি।

ক. অপরিহার্য কার্নাবলি (Essential functions): যেসব কাজ সম্পন্ন না করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয় সেগুলোকে মৌলিক বা অপরিহার্য কার্যাবলি বলে। নিম্নে রাষ্ট্রের অপরিহার্য কার্যাবলি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

১. প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ: রাষ্ট্রের অপরিহার্য কার্যাবলির মধ্যে প্রধান কাজ হলো প্রশাসন পরিচালনা এদ্ধ সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন। আর এজন্য সরকারকে আইন বিভাগ প্রদত্ত আইন দ্বারা শাসন বিভাগ গঠন করতে হয়। তাছাড়া সঠিকভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন, কর্মচারী নিয়োগ করা এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

২. অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা: রাষ্ট্রের শাস্তিশৃঙ্খলা এবং দেশের অভ্যন্তরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাষ্ট্র পুলিশ বাহিনী গঠন করে থাকে। এজন্য পুলিশ বাহিনী সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ক্রয়, তাদের উপযুক্ত বেতন ভাতা এবং অপরাধীদের জন্য জেলখানা প্রতিষ্ঠা এবং দ্রুত সাজা ভোগের ব্যবস্থা রাষ্ট্র করে থাকে।

৩. সার্বভৌমত্ব রক্ষা: সার্বভৌমত্ব অর্জন না করলে যেমন রাষ্ট্র গঠিত হয় না, তেমনি সার্বভৌমত্ব হারালেও রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়। তাই সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য কাজ। সার্বভৌমত্ব রক্ষা না করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হতে বাধ্য।

৪. অর্থনৈতিক কাজ: রাষ্ট্রের সকল কার্যাবলি যথার্থভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আর্থিক কার্যাবলি ছাড়া রাষ্ট্রের সার্বিক কার্যাবলি অচল হয়ে পড়ে। তাই বিভিন্ন প্রকার কর নির্ধারণ ও তা সুষ্ঠুভাবে আদায় করা আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

৫. বিচারকার্য: ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রকে বিচার বিভাগ গঠন, সৎ ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ ন্যায়বিচার সম্পন্ন করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। আর এ ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই কেবল অপরাধীদের শাস্তি বিধান করা এবং নিরপরাধীকে রক্ষা করা সম্ভব।

৬. আইন প্রণয়ন: আইন প্রণয়ন, আইন পরিবর্তন বা বাতিল প্রভৃতির জন্য রাষ্ট্রকে আইন বিভাগ গঠন করতে হয়। আইনগুলো যাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তার সঠিক ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিয়ে থাকে।

৭. কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন: অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ। কেননা বর্তমানে কোন রাষ্ট্রই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। রাষ্ট্রের অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য প্রতিবেশী ও দূরের রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা প্রয়োজন।

৮. জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান: রাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগণ যাতে অত্যন্ত নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে বাস করতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ। আধুনিক রাষ্ট্রে সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে।

৯. উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ: উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই বর্তমান কালের রাষ্ট্রগুলো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দ্বারা নাগরিকদের যথার্থ উন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

১০. অধিকার রক্ষা: আধুনিক রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ হলো নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। নাগরিকের এ অধিকারগুলো তাদের জীবন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রকার কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারতার কারণে বর্তমানে রাষ্ট্রের কার্যাবলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এবং অবকাঠামোভিত্তিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হলো রাষ্ট্রের প্রধান কার্যাবলি।