আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা কর।

অথবা, আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: আন্তর্জাতিকতাবাদ একটি বিস্তৃত ও ব্যাপক ধারণা বা মতবাদ। মূলত জাতীয়তাবাদের বৃহৎ পরিসরই হচ্ছে আন্তর্জাতিকতাবাদ। জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্তর্জাতিকতাবাদের সৃষ্টি। আধুনিক রাষ্ট্রের নানাবিধ কলহ ও বিরোধের দরুন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তা ছড়িয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ: আন্তর্জাতিকতাবাদ একটি বিশ্বজনীন ধারণা। এটি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে
বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। নিম্নে আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. বিভিন্ন আতির মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা: আন্তর্জাতিকতাবাদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি স্থাপন করা। এটি বিভিন্ন জাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরোধ, হিংসা, বিদ্বেষ এবং ঘৃণার পরিবেশ দূরীভূতকরণে বদ্ধপরিকর। এটি বিভিন্ন জাতির মানুষের মধ্যে এমন একটি বিশ্বজনীন ধারণা প্রদান করে, যা পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে সহায়ক।

২. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিকতাবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র যাতে পরস্পরের সাহায্য ও সহযোগিতা পেতে পারে আন্তর্জাতিকতাবাদ সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন গড়ে তোলে।

৩. যৌথ নিরাপত্তা: বিশ্বে শাড়ি ও নিরাপত্তা স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিকতাবাদ যৌথ নিরাপত্তায় বিশ্বাসী। যৌন নিরাপত্তা ক্লার্যকরী করার জন্য বিশ্বে জাতিপুঞ্জ, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সুতরাং যৌথ নিরাপত্তা হলো আন্তর্জাতিকতাবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

৪. বিশ্ব সমাজ প্রতিষ্ঠা: বিশ্ব সমাজ প্রতিষ্ঠা করা আন্তর্জাতিকতাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরোধ, হিংসা বিদ্বেষ ইত্যাদি নিরসনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই আন্তর্জাতিকতাবাদের লক্ষ্য। এজন্য বিশ্বসংস্থাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

৫. অবাধ বন্ধুত্ব স্থাপন: বিশ্বের বিভিন্ন জাতিসমূহের মধ্যে অবাধ বন্ধুত্ব স্থাপন করা আন্তর্জাতিকতাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এজন্য জাতীয়তাবাদের ধারণাকে বিকশিত করে আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারণা গড়ে উঠেছে। জাতীয় সত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিলোপ সাধন এর লক্ষ্য নয়, যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে অবাধ বন্ধুত্ব স্থাপনই এর মূল কাজ।

৬. জাতির প্রতি অড আনুগত্য রোধ: আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতির প্রতি অন্ধ আনুগত্য ও জাতীয় প্রাধান্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করে। এক জাতি যেন অন্য জাতিকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে সেজন্য আন্তর্জাতিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন জাতি যদি তাদের নিজস্ব জাতীয়তা নিয়ে অন্ধের মত অহংকার করে কিংবা অন্য জাতিকে ঘৃণার চোখে দেখে তাহলে আন্তর্জাতিকতাবাদ তার বিরোধিতায় লিপ্ত হয়।

৭. বিবাদবিসংবাদের নিষ্পত্তি: বিভিন্ন জাতির মধ্যকার বিবাদবিসংবাদ দূরীকরণ আন্তর্জাতিকতাবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এজন্য আন্তর্জাতিকতাবাদ বিভিন্ন রাষ্ট্রের উপর কিছু শর্ত আরোপ করে থাকে। এসব শর্ত সঠিকভাবে পূরণ হলেই জাতিসমূহের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে উঠে।

৮. সংকীর্ণ বিদ্বেষপূর্ণ জাতীয়তা বিরোধী: জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পরিহার করাই আন্তর্জাতিকতাবাদের বৈশিষ্ট্য। কেননা সংকীর্ণ ও বিদ্বেষপূর্ণ জাতীয়তাবাদ বিশ্বে শাস্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে বিঘ্ন ঘটায়। তাই শান্তি ও সংহতি স্থাপনের জন্যই আন্তর্জাতিকতাবাদ সংকীর্ণ ও বিদ্বেষপূর্ণ জাতীয়তা পরিহার করে।

৯. সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ঐক্য স্থাপন: আন্তর্জাতিকতাবাদের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য বিভিন্ন জাতির মধ্যে এমন এক ধরনের মানসিকতা বা ধারণা গড়ে তোলা হয়, যা মানুষকে পারস্পরিক হিংসাবিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ঐক্য স্থাপনে সহায়তা করে।

১০. জাতিগত স্বকীয় সত্তা বজায় রাখা: আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতিগত স্বকীয় সত্তা বজায় রেখেই পারস্পরিক ঐক্য গড়ে তোলে। এটি কখনোই জাতির স্বকীয় সত্তায় আঘাত হানে না, তবে অন্ধ বা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহারে প্রচেষ্টা চালায়।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আন্তর্জাতিকতাবাদ হলো একটি সর্বজনীন মানসিক ধারণা। এ ধারণায় বিশ্বাসী মানুষ পারস্পরিক হিংসাবিদ্বেষ ভুলে বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্বসমাজ গড়ে তুলতে প্রয়াসী। এজন্য বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থা যেমন- জাতিপুঞ্জ, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি গড়ে তোলা হয়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিকতাবাদ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।