ইকবালের মতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের শর্ত কী?

অথবা, আল্লামা ইকবাল কোন বিষয়কে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পূর্বশর্ত বলে মনে করেন?

অথবা, ইকবালের মতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের শর্ত সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ইকবালের মতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের শর্ত কিরূপ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, সংক্ষেপে আল্লামা ইকবালের মতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পূর্বশর্ত কিরূপ বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে আল্লামা ইকবাল বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। তিনি মুসলিম দর্শনে প্রাচ্যের মাধ্যাত্মিক ও পাশ্চাত্যের বস্তুবাদের গধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন। তিনি পাশ্চাত্যের সেসব দিক গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন, যেগুলো ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থি ছিল না। ইসলামি শিক্ষার যে দৃষ্টিভঙ্গি তা পুনর্জাগরণে তার অবদান অপরিসীম। তাই অনেক চিত্তাবিদ মনে করেন আল-গাজালির পর যদি এমন কোন চিন্তাবিদ থেকে থাকেন যিনি মুসলিম দর্শনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তাদ সক্ষম হয়েছিলেন তিনি হলেন আল্লামা মোহাম্মদ ইকবাল।

ব্যক্তিত্ব বিকাশের শর্ত: মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ কতিপয় বাহ্য ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা বা শর্তের উপর নির্ভর করে বলে ইকবাল মানে করেন, অতীত ইতিহাস ও কৃষ্টিগত ঐতিহ্যর প্রেরণী খুদী বিকাশের পথে সহায়ক। তবে এটা সত্য যে অতীতের অন্ধ অনুকরণ ভবিষ্যতের গতিপথকে রুদ্ধ করে দেয়। তবে সমর্থক দিক দিয়ে দেখলে বলা যায় যে, অতীত ইতিহাস ও সৃষ্টিগত ঐতিহ্যের প্রেরণা খুদী বিকাশের পথে ২য়ক ভূমিকা রাখে। তাছাড়া সৃজনশীলতা মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। এ কথা সত্য যে, মানুষ যদি কর্মে নিজেই প্রথম কোন উদ্দেশ্য গ্রহণ করে, তাহলে আল্লাহ তার কাজকে সম্পন্ন করার জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

আমরা জানি যে, আল্লামা ইকবাল পাশ্চাত্য আধুনিক ও প্রগতিশীল শিক্ষার দ্বারা শিক্ষক আর এর ফলে তার মধ্যে কুসংস্কার ও গতানুগতিকতার স্থান আমরা দেখি না। তিনি মনে করেন যে, নৈতিক ভালোত্ব ও মন্দত্ব কোন বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়। তিনি আরও বলেছেন পরজগতের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ এবং পার্থিব জগতের প্রতি বিরাগ মুসলমানদেরকে পূর্ণাঙ্গ জীবন গঠনে বাধাস্বরূণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইকবাল আধুনিক চিন্তাচেতনার প্রতিভূ হলেও সুফিবাদের অর্থনৈতিক শোষণ এবং সমাজবাদের রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের বিরোধী। আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধক অবাবের জন্য শিটি পাশ্চাত্যের সমালোচনা করেন। তবে তিনি সমাজতন্ত্রের সামাজিক ন্যায়বিচারকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখেন। আর এজন্য তাঁর মতে, তাকে যদি কোন রাষ্ট্রের শাসক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে প্রথমেই তিনি তাকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবেন সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বার্থে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, আল্লামা ইকবাল মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্য শক্তি ও অর্জন অতিমাত্রায় পরলোকমুখিতা বর্জন এবং খুদির বিকাশের জন্য আধ্যাত্মিক বা সজ্ঞানির্ভর জ্ঞান অর্জনের কথা বলেন। তিনি বুদ্ধিকে বা অভিজ্ঞকে কম গুরুত্ব দিলেও প্রত্যাদেশে গুরুত্ব স্বীকার করে নেন। তিনি খুদি বিকাশে অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূল প্রেরণা উপযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবহার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন।