ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের প্রেক্ষাপট লিখ।

অথবা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি লিখ।

অথবা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃক দেওয়ানি লাভের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক দিওয়ানী লাভের পটভূমি আলোচনা কর।

ভূমিকা: বক্সারের যুদ্ধে ভারতের সম্মিলিত শক্তির পরাজয় ভারতে রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও দুর্নীতি ও অব্যবস্থা চরম আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় ভারতে কোম্পানি প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত স্থাপনের লক্ষ্যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ লর্ড ক্লাইভকে দ্বিতীয়বার গভর্নর করে ভারতে প্রেরণ করেন।

কোম্পানির দেওয়ানি লাভের প্রেক্ষাপট: ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন। কিন্তু এ দেওয়ানি লাভকরার পূর্বে কোম্পানিকে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: ও ঠাপানী একাই

১. মুঘল আমলে ইংরেজদের আগমন: মুঘল আমলে বাণিজ্যের সূত্র ধরে ইংরেজরা প্রথমে ভারতবর্ষে আসে এবং ধীরে ধীরে তারা বাণিজ্য বিস্তার করে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে হরিহরপুর একটি কুঠি স্থাপন করেন। ১৬৫১ সালে বাংলার সুবাদার শাহ সুজার সময়ে ইংরেজ বণিকগণ মাত্র তিন হাজার টাকা বাৎসরিক রাজস্বের মাধ্যমে বাংলায় অবাধ বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে।

২. ইস্ট মুঘল সংঘর্ষ : মুঘল আমলে ইংরেজদের বিনাশুল্কে বাণিজ্য অধিকার দেওয়া হলেও কোম্পানির কর্মচারীদের অন্যায়ভাবে বাণিজ্যের জন্য গোলযোগ দেখা যায়। এ ধরনের অবস্থায় ১৬৮৬ সালে তারা হুগলি আক্রমণ করলে মুঘল ও ইংরেজদের মধ্যে সংঘর্ষ আরম্ভ হয়। এক বছর পর ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হিথ একটি নৌবহরসহ ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে চট্টগ্রাম আক্রমণ করলে ইস্ট-মুঘল সংঘর্ষ আরম্ভ হয়।

৩. ইংরেজদের জমিদারি লাভ: ১৬৯৬ সালে ইংরেজরা সুতানটি নামে যে নব-কুঠির নির্মাণ করেন তা সুরক্ষিত করার অধিকার লাভ করেন। ১৭০০ সালে ইংরেজরা কলকাতায় একটি দুর্গ নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের তদানীন্তন রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে নাম রাখেন ফোর্ট উইলিয়াম।

৪. ফররুখ শিয়ারের ফরমান লাভ: ১৭১৩ সালে গৃহ যুদ্ধের মাধ্যমে বাহাদুর শাহের পৌত্র ফররুখ শিয়ার দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ইংরেজদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে মুঘল সম্রাট ১৭১৭ সালে এক ফরমান দ্বারা বাংলা, মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ে | বিনাশুল্কে বাণিজ্য অধিকার প্রদান করেন।

৫. আলীবর্দী খানের নীতি: ঐতিহাসিক রবার্ট ওর্ম বলেছেন, “নবাব আলীবর্দী খান রাজকার্যে ও ব্যবসায় ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এর ফলে শাসনকার্যে হিন্দুদের প্রভাব প্রতিপত্তি হয়। ফলে সমাজের সব ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্য স্থাপিত হয়।”

৬. কোম্পানির দেওয়ানি লাভ: রাজনৈতিক শক্তির দিক দিয়ে প্রায় পঙ্গু ও এক প্রকার অসহায় সম্রাট শাহ আলম কতিপয় শর্তে ইংরেজ কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি প্রদান করেন। শর্তানুসারে কোম্পানি সুবা বাংলার রাজস্ব শাসন পরিচালনার ভার কোম্পানির উপর ন্যস্ত হয়। কোম্পানি সুবা বাংলার রাজস্ব আয় থেকে সম্রাটকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা প্রদান করবে এবং নিজামত শাসনের জন্য বাংলার নবাবকে প্রদান করতে হবে বার্ষিক ৫৩ লক্ষ টাকা। শর্তানুসারে, ১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট কোম্পানি দিল্লির মুঘল সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি তথা রাজস্ব শাসনের অধিকার লাভ করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল আমলে ইংরেজ বণিকরা বাংলায় বাণিজ্য করার জন্য আসেন এবং ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার পথ সৃষ্টি করেন এবং ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে সব বাধাকে চিরতরে দূর করেন। এ দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে কোম্পানি ভারতের অঘোষিত সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।