অথবা, উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, উগ্র জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা: জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা। এর বিকাশ ঘটেছিল বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে এশিয়ায়। তবে জাতীয়তাবাদের জন্ম ইউরোপে এবং ইউরোপ থেকে এটি পরবর্তী সময়ে এশিয়া ও আফ্রিকায় এসেছিল। একটি জনগোষ্ঠীর যখন একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব থাকবে, তখন জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা লাভ করবে। এ জাতীয়তাবাদের আবির্ভাবে পৃথিবীর কোথাও একনায়কতন্ত্রের অবসান হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আবার কোথাও আদর্শ ভ্রষ্ট জাতীয়তাবাদ বিশ্ব সভ্যতার পক্ষে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উগ্র জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যখন কোন জাতি নিজেদের সকল কিছুকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে, তখন তারা নিজেদেরকে অন্যান্য জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করে এবং এভাবে জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়ে মিথ্যা জাত্যাভিমানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার লক্ষ্যে তখন আগ্রাসনমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতেও দ্বিধাবোধ করে না, তখন তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্থে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জাতীয়তাবাদের বাণী জীবন্ত সত্য হিসেবে গৃহীত হয়। কিন্তু জার্মান ও ইতালিতে এ জাতীয়তা উগ্র বা চরম রূপ ধারণ করে। ১৯০০ সালের দিকে জার্মানি, ব্রিটিশের একচেটিয়া বাজারের আধিপত্যে আঘাত করে ব্রিটিশের নৌশক্তি এ সমস্যার সম্মুখীন হয়। লেবেন গ্রামের আওতায় সমস্ত জার্মান জাতিকে এক করার চেষ্টা করা হয়। শুরু হয় ইহুদিদের উপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার। ইহুদিরা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ১৯৩৮ সালে জার্মান জনসাধারণ পোল, চেক, স্নাভ জাতিকে বশ্যতা স্বীকার করানোর জন্য অস্ট্রিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। এভাবে জার্মানিরা উগ্র জাতীয়তাবাদের আওতায় সমগ্র বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্য স্থাপনের পরিকল্পনা করে। অপরদিকে ইতালিও একই স্বপ্ন দেখছিল। এদিকে রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর লেনিন জনগণের অধিকারসমূহ ঘোষণা করলেন। কিন্তু স্ট্যালিন যখন ক্ষমতায় আসলেন, তখন তিনি লেনিনের নীতি পরিবর্তন করে ফেলেন। তাঁর ইচ্ছা যে সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের অধীনে এক বিশ্বজোড়া সমাজতান্ত্রিক দেশ গঠিত হবে। ১৯২১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন
প্রজাতন্ত্রের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করা হয়। এভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদ আধুনিক সভ্যতার মাঝে দোর্দণ্ড প্রতাপে বিকাশ লাভ করে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনায় বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ নীতির যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। যেসব দেশে কোন জাতির উপর গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি করছে, সেসব দেশে জাতীয়তাবাদ অপরিহার্য। তবে উগ্র জাতীয়তাবাদ কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। উগ্র জাতীয়তাবাদ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।