অথবা, এনফিল্ড রাইফেল বলতে কী বুঝ?
অথবা, এনফিল্ড রাইফেল সম্পর্কে কী জান?
উত্তর :ভূমিকা : কোম্পানির শাসনামলে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে ১৮৫৭ সালের ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ অন্যতম। বিভিন্ন কারণে এ ঘটনাটি ইতিহাসে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এ বিদ্রোহের পরই ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা সরাসরি নিজ হাতে গ্রহণ করে। বঞ্চিত ভারতীয় সৈন্যদের একশ বছরের বঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ ছিল এ সিপাহী বিদ্রোহ।
এনফিল্ড রাইফেল : নিম্নে এনফিল্ড রাইফেল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. রাইফেল প্রবর্তন: ১৮৬৬ সালে সেনবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেল নামের নতুন একটি রাইফেল প্রবর্তন করা হয়। বিশেষ ধরনের রাইফেলের কার্তুজ ছিল পণ্ডর চর্বি মিশ্রিত এবং দাঁত দিয়ে কেটে এটি রাইফেলে ঢুকাতে হতো।
২. সৈনিকদের মধ্যে সন্দেহের জাল বপন: ১৮৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে সৈনিকদের মধ্যে গুজব রটে যায় যে, হিন্দু ঐ মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মনাশ করার জন্য এনাইস্ট রাইফেলের কার্তুজে গরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত করা হয়েছে। অবশ্য পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সত্যিই ঐ কার্তুজে গরু কিংবা শূকরের চর্বি মিশ্রিত হয়েছে।
৩. বিদ্রোহের সূচনা: চর্বি মিশ্রিত টোটার খবর প্রচারিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম বহরমপুরে বিদ্রোহের সূচনা হয়। এরপর কলকাতার নিকটবর্তী ব্যারাকপুরের সৈন্যরা এ কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়।
৪. মঙ্গল পান্ডের অবদান: বিদ্রোহের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে মঙ্গল পান্ডে নামক একজন সৈনিকের মাধ্যমে। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ তিনি প্রকাশ্যে বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। একজন ইংরেজ সেনাদক্ষ তাকে বাধা দেওয়ায় পান্ডে তাকে আক্রমণ করে আহত করে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এ অবস্থায় সমগ্র রেজিমেন্ট ভেঙে দেন। মঙ্গল পান্ডে ও তার সমর্থক জমাদার ঈশ্বর পান্ডেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৫. সামরিক আইনের বিচার : ১৮৫৭ সালের ২৪ এপ্রিল মিরাটের সেনাছাউনিতে ৯০ সৈনিকের মধ্যে ৮৫ জনই চর্বি মিশ্রিত কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। সামরিক আইনে তাদের বিচার করে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৯ মে তাদের সমবেত সেনাবাহিনীর সামনে হাতে পায়ে বেড়ি লাগিয়ে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ১০ মে তাদের সহকারীরা বলপূর্বক জেলখানায় প্রবেশ করে তাদের মুক্ত করে। এ সময় সৈনিকদের বিদ্রোহাত্মক মনোভাব পরিত্যাগের জন্য কর্ণেল ফিনিস উপদেশ দিতে গেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর ঐ দিনই শুরু হয় সিপাহী বিদ্রোহ।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড নামক রাইফেলের প্রবর্তন। আর এ কারণে ভারতবর্ষের ইতিহাসের গতিধারা ১৮৫৭ সালের পর থেকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতে শুরু করে। তাই এনফিল্ড রাইফেল এদেশের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।