এরিস্টটলের বিপ্লবের বিশেষ কারণসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, এরিস্টটলের বিশেষ বিপ্লব কেন সংঘটিত হয় ব্যাখ্যা কর?

অথবা, এরিস্টটলের বিশেষ বিশেষ কারণ সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: রাজনৈতিক দর্শনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রাচীনকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ Politics এর পঞ্চম অধ্যায়ে বিপ্লব সম্পকিত মতবাদ ব্যাখ্যা ও বিপ্লবের প্রতিকারের উপায়গুলো উল্লেখ করেছেন। এখানে বিপ্লবের কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বিপ্লবের বিশেষ কারণ’: বিপ্লবের সাধারণ কারণগুলো নির্ধারণের পর এরিস্টটল বিপ্লব সম্পর্কে কতকগুলো বিশেষ কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। বিপ্লবের এসব নির্দিষ্ট কারণসমূহের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো প্রধান:

১. জনমনে চরম অসন্তোষ: শাসক শ্রেণির অত্যধিক ধনলিন্দার ফলে জনগণের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এ অসন্তোষ যখন চরম আকার ধারণ করে তখনই বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে।

২. অন্যায়ভাবে সম্মান প্রাপ্তির ইচ্ছা; অন্যায়ভাবে সম্মান প্রাপ্তির ইচ্ছা বিপ্লবের আরেকটি নির্দিষ্ট কারণ। রাষ্ট্রের যোগ্য রাক্তি যখন উপযুক্ত সম্মান লাভ থেকে বঞ্চিত হয় এবং অযোগ্য ব্যক্তিরা তা লাভ করে এরূপ অবস্থা বিপ্লবের সূচনা করে।

৩. শাসকদের বিভিন্ন অংশের চক্রান্ত: শাসকদের বিভিন্ন অংশের চক্রান্তের ফলেও বিপ্লব ঘটতে পারে। শাসক শ্রেণির একটি অংশ যদি চক্রান্ত করে অন্য অংশকে ঘায়েল করতে চায় তাহলে বিপ্লব সৃষ্টি হতে পারে।

৪. দুর্নীতিমূলক কাজ ও ভয়ভীতি: ভয়ভীতি থেকেও অনেক সময় বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। দুর্নীতিমূলক কাজের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শাস্তি ভোগের ভয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রে বিপ্লব আনয়ন করতে পারে।

৫. রাষ্ট্রের কোন অঞ্চলের অস্বাভাবিক প্রসার ও সমৃদ্ধি: রাষ্ট্রের কোন অঞ্চলের অস্বাভাবিক প্রসার বিপ্লব ঘটাতে সহায়তা করে। এরিস্টটলের মতে, মানব দেহের বিভিন্ন অংশ অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে যেমন এর সঠিক কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের কোন একটি অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি সমৃদ্ধশালী হলেও রাষ্ট্রে বিপ্লব দেখা দেয়।

৬. রাজনৈতিক কলহ ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা: রাজনৈতিক কলহ ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় এবং এ অবস্থা বিপ্লবের পথকে সুগম করে। এরিস্টটল বলেছেন যে, “নির্বাচনে দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্র করে জনগণের রায়কে নস্যাৎ করা হলে জনগণ বিদ্রোহী হয়ে উঠে।”

৭. শাসকের অসতর্কতা: শাসকের অসতর্কতা হেতু বিপ্লবের সূচনা হতে পারে। এরিস্টটলের মতে, অনেক সময় ছোটখাটো ঘটনাকে অবহেলা করলে বা যথাযথ গুরুত্ব প্রদান না করলে, তা আস্তে আস্তে বৃহৎ রূপ লাভ করতে পারে যা বিপ্লবের পথ সৃষ্টি করে।

৮. তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে: অনেক সময় নিতান্ত ছোটখাটো ঘটনা থেকেও বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটতে পারে। প্রাচীনকালে সিরাকিউসে দু’জন যুবকের প্রেমঘটিত ব্যাপার নিয়েই বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। আবার হেলেনকে কেন্দ্র করেও ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছে।

৯. ন্যায় ও অসাম্য সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা: বিপ্লবের কারণ হচ্ছে শ্রেণিগত ন্যায়বোধ বা মানুষের সহজাত সাম্য ও
অসাম্য স্পৃহা। ক্ষমতার লোভ মানুষের চিরন্তন প্রকৃতি। যারা এ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে দূরে তারা সবসময় বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন থাকে। বঞ্চিত শ্রেণি চায় বিপ্লব করায়ত্ত করে শাসকের সমপর্যায়ে উন্নীত হতে আর শাসক চক্র অসাম্য রক্ষা করে সেটাকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে চায়।

১০. মানসিক অসন্তুষ্টি: কখনো সমাজের এক শ্রেণির লোক মনে করে, ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত তাদের যোগ্যতা নিজেদের চেয়ে বেশি নয় তা হলে তারা কেন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এ ধরনের মানসিকতা বিপ্লবের সৃষ্টি করে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত কারণগুলো বিপ্লবের বিশেষ কারণ যা এরিস্টটল পরবর্তী কালে পঞ্চম পুস্তকের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এরিস্টটলের মতে এসব কারণগুলোর প্রেক্ষাপটে বিপ্লব ঘটে। ফলে সমাজে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়।