অথবা, এরিস্টটলের মতে নাগরিকতা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, এরিস্টটলের নাগরিকত্ব তত্ত্বটি কী?
অথবা, এরিস্টটলের নাগরিক সম্পর্কে ধারণা উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেসব দার্শনিক মহাপুরুষ সাফল্যের গৌরবোজ্জ্বল আসনে অধিষ্ঠিত, গ্রিক দার্শনিক Aristotle নিঃসন্দেহ তাদের মধ্যে অন্যতম। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রতত্ত্বের ক্ষেত্রে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা অতুলনীয়। এরিস্টটলের বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘The Politics’ এ গ্রন্থের মধ্যে তাঁর রাষ্ট্র সম্পর্কিত যাবতীয় চিন্তার পূর্ণ বিকাশ সাধিত হয়েছে। Politics এর তৃতীয় খণ্ডে তিনি নাগরিকতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর নাগরিকতা বিষয়ক মতবাদ রাষ্ট্রদর্শনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
নাগরিকতা: এরিস্টটল এর মতে, “নগর রাষ্ট্রের, তৎকালীন গ্রিকের বিচার এবং শাসন সংস্থার সভ্য হিসেবে আইনবিষয়ক কাজ এবং রাষ্ট্র সভার আলোচনায় অংশগ্রহণ করে যে ব্যক্তি সে নাগরিক।” অর্থাৎ, নাগরিক হচ্ছে তারাই, যাদের ন্যায়বিচার প্রশাসনে অংশীদারিত্ব আছে এবং যে কোন সময়ের জন্য সরকারি অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের অধিকার রাখে। এরিস্টটল এর ভাষায়, “Any one who has a share in the administration of justice and the right to hold office for any period is a citizen.” এরিস্টটল এর মতে, “একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করলেই নাগরিক হওয়া যায় না। যদি তাই হতো তাহলে বিদেশি ও দাসরাও নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।” অনুরূপ যারা শিশু এখনো যুবক হয় নি তারাও নাগরিক নয়। যদি কখনো দেখা যায় যে, এরিস্টটল এর মতে, বাবা নাগরিক কিন্তু মা নাগরিক নয়। অনুরূপ মা নাগরিক বাবা নাগরিক নয় এরূপ ক্ষেত্রে কেউই নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে না।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল তাঁর নাগরিকতা বিষয়ক ধারণায় অত্যন্ত গোঁড়ামির পরিচয় দিয়েছেন। কেননা তিনি শুধু ধনিক শ্রেণির মধ্যে নাগরিকতাকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। নগর রাষ্ট্রকে সামনে রেখে প্রকাশিত এ মতবাদটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য না হলেও অনেক ক্ষেত্রে এখনো প্রযোজ্য। বর্তমান কালেও রাষ্ট্রের সকলেই নাগরিক অধিকার লাভ করে না। যেমন- অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং মস্তিষ্কবিকৃত লোকদের ভোটদানের অধিকার নেই। বিদেশিদেরকেও নাগরিক বলা যায় না। পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক নাগরিকত্বের ধারণার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসঙ্গতি থাকলেও প্রাচীন নগর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ মতবাদটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।