এরিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রভাব সংক্ষেপে সমালোচনা কর।

অথবা, এরিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রভাব বলতে কী বুঝ?

অথবা, এরিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রাধান্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: এরিস্টটলের চিন্তাধারা ও রাষ্ট্রদর্শনকে অনুসরণ করে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন। তাই তাঁকে ‘জ্ঞানী ব্যক্তিদের শিক্ষক’ বলা হয়। মধ্যযুগীয় সেন্ট টমাস একুইনাস, মার্সিলিও অব পাড়ুয়া এবং মাঁন্তের মধ্যেও এরিস্টটলের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মেকিয়াভেলি তাঁর ‘দি প্রিন্স’ এবং জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কসের শ্রেণিসংগ্রামের ধারণার পূর্বাভাস দিয়ে গেছেন এরিস্টটল। ধনী ও দরিদ্র দু’টি পরস্পর বিবদমান শ্রেণি, এরিস্টটল তা দ্বার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন। এরিস্টটলের এ ধারণা মার্কসবাদের ভিত্তি রচনা করতে যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছে।

এরিস্টটলের চিন্তাধারার প্রভাব: এরিস্টটলের চিন্তাধারার প্রভাব নিম্নে সমালোচনা করা হলো:

সমালোচনা: এরিস্টটলের অধিকাংশ মতবাদ রাষ্ট্রদর্শনে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও তিনিও সমালোচনার সম্মুখীন হন:

১. গণতান্ত্রিক সরকার: এরিস্টটল গণতান্ত্রিক সরকারকে নিকৃষ্ট সরকার বলে অভিহিত করেছেন। যদিও আজকের গণতান্ত্রিক সরকার এক সার্বজনীন ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।

২. দাসপ্রথা: তিনি দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন। কেননা দাসপ্রথা না থাকলে নাগরিকরা সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে পারবে না। তিনি যেহেতু সুদূর অতীতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে তাঁর চিন্তাধারা প্রকাশ করেছেন, সেহেতু বর্তমান চিন্তাধারার সাথে গরমিল হতে বাধ্য।

৩. পৌর অধিকার: এরিস্টটল ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা স্বীকার করলেও পৌর অধিকারের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

৪. মৌলিকত্বহীন: অধ্যাপক সেবাইন এরিস্টটলকে Less original genius বলে মন্তব্য করেছেন। একথায় যতটা মৌলিকত্ব তাঁকে আরোপ করা হয়, ততটা মৌলিকত্ব তাঁর নেই।

৫. মধ্যতন্ত্রের শাসন: এরিস্টটল মধ্যতন্ত্রের শাসনকে সর্বোৎকৃষ্ট শাসন বললেও বর্তমানে এ মধ্যতন্ত্রের শাসন বিশ্বের কোথাও প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় না।

৬. নাগরিকত্বের ধারণা: তিনি নারী, দাস, শ্রমজীবী মানুষ এবং বিদেশিদের নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। এর ফলে তাঁর নাগরিকতার ধারণাটি পূর্ণতা পায় নি।

উপসংহার: উপর্যুক্ত সমালোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটলের চিন্তাধারা যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিককে অনুপ্রাণিত করেছে। তেরো শতকের চিন্তাধারা তাঁরই প্রভাবে অভূতপূর্বভাবে আন্দোলিত হয়। চার্চ প্রথমে এরিস্টটলকে অবিশ্বাস করলেও পরবর্তী পর্যায়ে জ্ঞানীদের শিক্ষক বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর সুচিন্তিত ও পরীক্ষামূলক অভিমতসমূহ বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধি করেছে। এরিস্টটলের মতবাদকে বাদ দিলে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই এরিস্টটলকে নিঃসন্দেহে আমরা একজন রাষ্ট্রচিন্তানায়ক হিসেবে গণ্য করতে পারি।