ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার সম্পর্কে লিখ।

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার বিভাগীয় ন্য সংস্কার বলতে কী বুঝ?

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার সম্পর্কে কী জান?

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা: ওয়ারেন হেস্টিংস শাসন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও তিনি বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে আরও তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৭৭২ সালে নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করে হেস্টিংস বিচার বিভাগের সংস্কারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। কমিটি অব সারকিউট এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় তিনি একটি করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার: ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পদক্ষেপ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১. মফস্বল দেওয়ানি আদালত : জমিদারি ও তালুকদারি সংক্রান্ত মামলা মোকাবিলা, অপরাপর যাবতীয় দেওয়ানি অর্থাৎ ভূমি সংক্রান্ত মামলার বিচারের ভারও আদালতের উপর ন্যস্ত করা হল। জমিদারি বা তালুকদারির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলার বিচার ক্ষমতা ছিল সদর দেওয়ানি আদালতের হাতে। গভর্নর ও তার কাউন্সিলের দু’জন সদস্য নিয়ে এ আদালত গঠিত হতো।

২. মফস্বল ফৌজদারি আদালত: এ বিচারালয় যাবতীয় ফৌজদারি মামলার বিচার করার অধিকার প্রাপ্ত ছিল। কেবলমাত্র যে সকল মামলার আসামিকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হতো, এসব মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য সদর নিজামত আদালতে প্রেরণ করা হতো। আদালতে কাজী ও মুফতি দু’জন মৌলভীর সাহায্য নিয়ে আইনের ব্যাখ্যা করতেন।

৩. বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ: ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস বিচার বিভাগকে পৃথক করেন। ফলে বাণিজ্য বিভাগের কর্মচারীরা বিচার ও শাসন কাজে হস্তক্ষেপের অধিকার হারায়।

৪. মৃত্যুদণ্ড ও সম্পত্তি ক্রোক নিষিদ্ধ: ওয়ারেন হেস্টিংস জেলা ফৌজদারি আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া বন্ধ করে দেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি গ্রহণের ক্ষমতাও সীমিত করে দেন। এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তিনি নিজামত আদালতের অনুমোদন দেওয়ার বিধান চালু করেন।

৫. সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা: ওয়ারেন হেস্টিংস বিচার কার্য সম্পাদনের জন্য কলকাতায় একটি সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এ
কোর্ট ইংল্যান্ডের কমন ল’ অনুসারে বিচারের দায়িত্ব লাভ করে।

৬. জেলাভিত্তিক দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত গঠন : ওয়ারেন হেস্টিংস বিচার বিভাগীয় সংস্থার পদক্ষেপের জন্য প্রতি জেলায় একটি করে দেওয়ানি ও একটি করে ফৌজদারি আদালত চালু করেন।

৭. বিচার ক্ষেত্রে বিবিধ তিনি বিচার ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য বিষয় দেখাশুনা করতেন। যথা-

(ক) বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে পূর্বে কাজী মুফতি প্রভৃতি অর্থগ্রহণ করতেন। হেস্টিংস তা উঠিয়ে দেন।

(খ) দেওয়ানি বিচারে হিন্দু প্রজার ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের নিয়ম প্রয়োগের নীতি হেস্টিংস স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

(গ) সুদের হার শতকরা একশত টাকা পর্যন্ত মাসিক শতকরা ৩.১২ এবং একশত টাকার বেশি অর্থের জন্য মাসিক ২.০০ টাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংস বিচার বিভাগের সচ্ছলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এবং আইনি কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগের সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে অনেক নতুনত্ব আনয়ন করেন। শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তিনি মৌলিকত্বের প্রমাণ দেন।