অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্বনীতির পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্বনীতির পরিবর্তনসমূহ বলতে কী বুঝ?
উত্তর: ভূমিকা: ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন। বাংলার দেওয়ানি লাভ করার ফলে এক পর্যায়ে ক্লাইভ দ্বৈতশাসন চালু করেন। দ্বৈতশাসনের কুফল, কোম্পানি কর্মচারীদের দুর্নীতির ফলে ১৭৭০ সালে মন্বন্তর দেখা দেয়। এভাবে বাংলার জনসাধারণের জীবনযাত্রায় নেমে আসে চরম অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন। কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতভিজ্ঞ ওয়ারেন হেস্টিংসকে গভর্নর করে পাঠান ১৭৭২ সালে এবং তিনি ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিয়ামক আইন পাস করে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হন।
হেস্টিংসের রাজস্বনীতির পরিবর্তন: হেস্টিংসের প্রথম দফা রাজস্বনীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে ১৭৭৩ সালে নভেম্বর মাসে ডাইরেক্টরের নির্দেশে বোর্ড অব রেভিনিউ ১৭৭২ সালে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব কেবলমাত্র ইংরেজ ও দেশীয় উভয় প্রকার কর্মচারীবর্গের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তা ১৭৭৩ সালে ইংরেজ ও দেশীয় উভয় প্রকার কর্মচারীর উপর অর্পণ করা হয়। ১৭৭৬ সালে হেস্টিংস রাজস্ব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আমিনী কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করেন। পূর্বে যে প্রাদেশিক কাউন্সিলর নিয়োগ করেছিলেন তা উঠিয়ে দিয়ে আবার কালেক্টরের পদ পুনর্বহাল করেন। তিনি পূর্বে জমি ইজারা দেওয়ার যে নিয়ম করেছিলেন তা উঠিয়ে দিয়ে সাসেককালের জমিদারি প্রথা চালু করেন। কিন্তু পূর্বেকার এ জমিদার প্রথার পুনঃপ্রবর্তন করা ছিল দুরূহ কাজ। কারণ:
১. জমিদারদের প্রতিপত্তি বিনষ্ট: পূর্বে জমিদারগণ নিজ নিজ এলাকায় প্রতিপত্তি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু সে প্রতিপত্তি প্রায় পরবর্তীতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। জমিদারের অধীন প্রজাবর্গের নিরাপত্তা, তাদের বিচার- প্রভৃতি কাজ বা দায়িত্ব তখন আর ছিল না। তারা কেবল রাজস্ব আদায়কারীতে পরিণত হয়েছিল।
২. হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার সম্ভবপর ছিল না : কোম্পানির হাতে শাসনব্যবস্থা চলে যাওয়ার ফলে জমিদারদের পূর্বেকার মর্যাদা আর ছিল না। সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার শর্তে জমি নির্দিষ্টকালের জন্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে কিছুকাল থাকার ফলে পূর্বেকার জমিদার প্রথার ভিত্তি প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই এটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভবপর ছিল না।
৩. অর্থনৈতিক অবনতি: কোম্পানি কর্তৃক রাজস্ব নির্ধারণের ফলে রাজস্বের পরিমাণ অত্যধিক বেশি ধার্য করা হয়েছিল। ফলে জমিদারদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছিল। তবে এ ব্যবস্থায় জমিদারি স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। জমিদারি অনবরত হস্তান্তরিত হয়েছিল।
৪. পূর্বের জমিদারির ঐতিহ্য নষ্ট: পূর্বের জমিদারির ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ার ফলে দেখা যায়, পূর্বের ব্যবস্থায় জমিদারি ব্যবস্থার প্রকৃত গুরুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। পূর্বে জমিদার বিদ্বান, শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিকে করা হতো। কিন্তু কোম্পানির হাতে দায়িত্ব দেওয়ার ফলে জমিদারের প্রধান কাজ কেবল অর্থ আদায় করা। অন্য কোনো ক্ষেত্রে কোনো সম্পর্ক ছিল না।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে রাজস্ব সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথম অবস্থায় পূর্বের নায়েব নাজিমদের পদ বিলুপ্ত করে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে যে রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় তা সফল হতে ব্যর্থ হয়। তাই হেস্টিংস বাধ্য হন নীতির পরিবর্তন করতে। তাই রাজস্ব সংক্রান্ত নীতির পরিবর্তন করেন।