অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের রেগুলেটিং অ্যাক্ট সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের রেগুলেটিং অ্যাট সমালোচনাসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ১৭৭৩ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক রেগুলেটিং অ্যাক্ট নামক এক নতুন আইন প্রবর্তন। এর ফলে র বোর্ড অব গভর্নরকে কোম্পানির শাসন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে অবহিত করতে হত। ইংরেজ কোম্পানি ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ওয়ারেন হেস্টিংসকে গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতবর্ষে পাঠান। ফলে হেস্টিংস ১৭৭২ F সালে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট : ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃপক্ষ রেগুলেটিং অ্যাক্ট নামক এক নতুন আইন প্রবর্তন করেন। এই অ্যাক্টগুলো নিমরূপ:
১. এই অ্যাক্ট বলে গভর্নরকে গভর্নর জেনারেল আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। শাসন সংক্রান্ত ব্যপারে আরও চারজন সদস্য নিয়ে তার শাসন পরিষদ গঠিত হয়। এ চারজন সদস্যের নাম হচ্ছে- ফ্লেভারিং, মন্সোন, বারওয়েল এবং ফিলিপ ফ্রান্সিস।
২. বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলকে যুদ্ধ ঘোষণা এবং শান্তি স্থাপনের ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
৩. একজন প্রধান বিচারপতি এবং অপর তিনজন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামের সুপ্রীম কোর্ট নামে একটি বিচারালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিচারালয়কে সম্পূর্ণভাবে গভর্নর ও কাউন্সিল হতে পৃথক ও স্বাধীন রাখা হয়। C
৪. এর ফলে বোর্ড অব গভর্নরকে কোম্পানির শাসন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে বৃটিশ সরকারকে অবহিত করতে হত।
সমালোচনা: এই অ্যাক্ট সম্পর্কে কোনো কোনো ঐতিহাসিক সমালোচনা করে বলেন যে, এটা গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে দেয়নি।
১. গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিল মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সিদ্বয়ের ওপর কিরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন তারও সুস্পষ্ট কোনো রূপরেখা প্রদান করেনি।
২. ক্ষমতা কিংবা সম্মান কোনো কিছুই নির্ধারণ না করায় গভর্নর জেনারেল এবং সুপ্রীম কোর্টের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব বাঁধত।
৩. কাউন্সিলের ভোটাধিকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় গভর্নর জেনারেল শাসন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারায় শাসনব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।
৪. দেওয়ানি মামলা মোকদ্দমাও সুপ্রীম কোর্টের আজ্ঞাভুক্ত হয়ে পড়লে রেগুলেটিং অ্যাক্ট কোম্পানির গঠনতন্ত্র ও কার্যপদ্ধতির উন্নতি সাধনে সম্পূর্ণভাবে সফলকাম হয়নি। পরবর্তীকালে এ সব দোষ-ত্রুটি ১৭৮৪ এবং ১৭৮৬ সালে আইনের দ্বারা সংশোধন করা হয়।
উপসংহার পরিশেষে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক পি.ই. রবার্টসের সাথে একমত হয়ে বলতে পারি যে, “সম্ভবত, হেস্টিংস ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ইংরেজ শাসক। কিছুটা নৈতিক দোষ থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন গতিশীল ও উর্বর মস্তিষ্ক, অক্লান্ত শক্তি এবং অটুট মনোবলের অধিকারী। এই সব গুণ তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদগণ হতে পৃথক বৈশিষ্ট্য দান করেছে।