ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সংস্কারসমূহআলোচনা কর।

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ সম্বন্ধে কী জান?

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সংস্কারসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ বেনিয়া শ্রেণি বাংলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হাতে পান। ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলায় দ্বৈতশাসন কায়েম করেন। ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলার সর্বত্র যে অত্যাচার ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল তা পরিবর্তন করে সুষ্ঠুভা। শাসনকার্য পরিচালনার প্রয়োজন ছিল। দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান, দেওয়ানি পদ বিলুপ্তকরণ, সদর দেওয়ানি ও সদয় নিজামও আদালত গঠন, রাজস্ব বোর্ড গঠন প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব।

ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রশাসনিক সংস্কার: ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রশাসনিক সংস্কারের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১. নায়েব-সুবার পদ বিলুপ্তকরণ: লর্ড ক্লাইভ দেওয়ানি লাভের পর মুঘল আমলের রাজস্ব ব্যবস্থা অপরিবর্তিত রেখে নায়েব ও সুবার উপর রাজস্ব আদায়ের ভার ন্যস্ত করেন। কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস ক্ষমতায় এসে নায়েব ও সুবার পদ বিলুপ্ত করেন এবং একটি নতুন পদের সৃষ্টি করেন। এরপর তিনি কিছু সংখ্যক পরিদর্শক নিয়োগ করেন।

২. রাজস্ব বোর্ড গঠন : হেস্টিংস দ্বৈতশাসনের প্রবর্তিত রাজস্ব আদায়ের জন্য বাংলায় একজন দেওয়ান ও বিহারের দেওয়ানের পদ বাতিল করে দেন। রাজস্ব কার্য পরিচালনার জন্য হেস্টিংস ভ্রাম্যমান কমিটি নামে একটি ক্ষুদ্র সভা গঠন করেন। জমিদারগণকে এক সাথে পাঁচ বছরের জন্য জমিদারির বন্দোবস্ত দেওয়া হবে বলা হল। দেওয়ানির কোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হল। গভর্নর ও তার কাউন্সিল নিয়ে একটি রেভিনিউ বোর্ড গঠন করা হল। দেওয়ানি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদির সর্বোচ্চ দায়িত্ব অর্পিত হল বোর্ডের উপর।

৩. দেওয়ানি কোষাগার স্থানান্তরিত: দেওয়ানি কোষাগার স্থানান্তরের পেছনে ওয়ারেন হেস্টিংস অনন্য ভূমিকা রাখেন। হেস্টিংস দেওয়ানির কোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করেন।

৪. বিচার বিভাগীয় সংস্কার: ১৭৭২ সালে নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করে হেস্টিংস বিচার বিভাগের সংস্কারে হস্তক্ষেপ হ করেছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতায় সদর দেওয়ানি আদালত ও সদর নিজামত আদালত নামে দুটি পৃথক বিচারালয় স্থাপন করেন। গভর্নর ও তার কাউন্সিলের দু’জন সদস্যের সমন্বয়ে সদর নিজামত আদালত গঠিত ছিল। এ আদালতের প্রধান বিচারপতি নবাব কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। সদর দেওয়ানি ও সদর নিজামত আদালত দুটি যথাক্রমে মফস্বল দেওয়ানি আদালত ও মফস্বল ফৌজদারি আদালত হতে প্রেরিত আপিলগুলোর মীমাংসা করত।

৫. বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে বিবিধসমূহ: তিনি বিচার ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য বিষয় দেখাশোনা করতেন। যথা-

(ক) প্রত্যেক বিচারালয়ে মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি রক্ষা করা।

(খ) অন্তত ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা না করলে মোকদ্দমা তামাদি হয়ে যাওয়া।

(গ) দেনাদারকে পাওনাদারের নিজ গৃহে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন বন্ধ করার অধিকার নাকচ করা।

(ঘ) অত্যধিক পরিমাণ অর্থ জরিমানা নিষিদ্ধ করা।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংসের পদক্ষেপের মধ্যে প্রশাসনিক পদক্ষেপ একটু ভিন্ন ছিল। এর দ্বারা তিনি রাজ্যের সমস্ত কার্য সম্পাদন করেন। তিনি গভর্নর পদে নিযুক্ত হয়ে সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রশাসনিক সংস্কার পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি বাংলা তথা উপমহাদেশে কোম্পানির শাসনের ভিত প্রতিষ্ঠা করেন।