অথবা, কর্ণওয়ালিশ কোডের পটভূমি কী ছিল?
অথবা, কর্ণওয়ালিশ কোডের পটভূমি উল্লেখ কর।
উত্তর: ভূমিকা: রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন দেশীয় শাসন পদ্ধতি সংরক্ষণ করে দেশীয়দের হাতে শাসনভার ন্যস্ত করে এবং এর উপর থেকে শাসন করার পক্ষপাত। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ ৪৮টি রেগুলেশন বা আইন জারি করেন। উক্ত রেগুলেশনগুলো সাধারণভাবে কর্নওয়ালিশ কোড নামে খ্যাত। রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান বা ফরাসি বীর নেপোলিয়ানের মত একটি মহান ঐতিহাসিক কোড প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জনের চেষ্টা করেন কর্ণওয়ালিশ।
কর্নওয়ালিশ কোডের পটভূমি: লর্ড কর্নওয়ালিশের কোডের পটভূমি ছিল নিম্নরূপ:
১. পলাশীর যুদ্ধে কোম্পানির জয়লাভ: ১৭৫৭ সালের ২৬ জুন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে রবার্ট ক্লাইভ বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে ইংরেজ শক্তির সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে।
২. বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ: ১৭৬৪ সালের ২৩ অক্টোবর বক্সারে ইংরেজ কোম্পানির নিকট বাংলার নবাব মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের পরাজয় ঘটে। বক্সারের যুদ্ধে জয় লাভের ফলে বাংলায় কোম্পানির প্রত্যক্ষ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. কোম্পানির দেওয়ানি লাভ: যুদ্ধলব্ধ ক্ষমতাকে বৈধ রূপ দেওয়ার জন্য ইংরেজরা ১৭৬৫ সালে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথে এলাহাবাদ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সন্ধির মাধ্যমে সম্রাট কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি তথা রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা স্থায়ীভাবে ছেড়ে দেন।
৪. দ্বৈতশাসনের প্রবর্তন : দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি বাংলায় দ্বৈতশাসন প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ নবাবকে নামেমাত্র সিংহাসনে রেখে শুধুমাত্র নিজামতি তথা আইন-শৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থা প্রভৃতি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজস্ব অর্থাৎ টাকা পয়সা এবং সামরিক শক্তি নবাবের নাগালের বাইরে রাখা হয়।
৫. কোম্পানির ক্ষমতা গ্রহণ: দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে গেলে বিলেতের পরিচালন সভার নির্দেশক্রমে ১৭৭২ সালের এপ্রিল মাসে দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস সম্পূর্ণ শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। ফলে বাংলায় নবাবি শাসনের অবসান ঘটে।
৬. পীটস ইন্ডিয়া অ্যাক্টের নির্দেশ: পীটস ইন্ডিয়া অ্যাক্ট ১৭৮৪ সালে কোম্পানির সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল শাসন পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে যে-কোনো একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
৭. কর্নওয়ালিশের কোড ঘোষণা: উক্ত আইন মোতাবেক একটি স্থায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য লর্ড কর্ণওয়ালিশকে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করে প্রেরণ করা হয়। ১৭৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গভর্নর জেনারেল হিসেবে যোগদানের পর থেকে কর্নওয়ালিশ একটি স্থায়ী শাসন কাঠামো রচনায় ব্যাপৃত থাকেন। অবশেষে ১৭৯৩ সালের মে মাসে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন। ৪৮টি রেগুলেশন বা আইন নিয়ে গঠিত এ শাসনতন্ত্র সার্বজনীনভাবে একটি কর্নওয়ালিশ কোড নামে পরিচিত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, একটি বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসেবে সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা এবং টিকে থাকার উপযোগী শাসনতন্ত্র রচনা করা। আমাদের আলোচ্য কর্নওয়ালিশের কোড তারই একটি নমুনা। কোম্পানির কর্মচারী এমনকি ব্রিটিশ সিভিলিয়ানদের বিরুদ্ধে অন্যসব = বিষয়ে মামলা করার অনুমতি কোডে নেটিভদের দেওয়া হলেও রাজস্ব অনাদায়ের কারণে জমিদারি বাজেয়াপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। এখানেই কোডের প্রকৃত স্বরূপ নিহিত।