কর্নওয়ালিশ কোডের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।

অথবা, কর্ণওয়ালিশ কোডের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ কর।

অথবা, কর্ণওয়ালিশ কোডের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা: লর্ড কর্নওয়ালিশ ইংল্যান্ডের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হবার পূর্বে তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দক্ষতা প্রদর্শন করেন। পার্লামেন্ট তাকে কোম্পানির দুর্নীতি দূর করার জন্য বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেন। তার সাত বছরের শাসনামলে তিনি বোর্ড অব কন্ট্রোল এবং ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ আস্থাভাজন ছিলেন।

কর্নওয়ালিশ কোডের বৈশিষ্ট্য: ১৭৯৩ সালে তিনি ৪৮টি রেগুলেশন বা আইন জারি করেন। উক্ত রেগুলেশনগুলি সাধারণভাবে কর্নওয়ালিশ কোড নামে খ্যাত। অবশেষে তিনি ১৭৯৩ সালের মে মাসে একটি পূর্ণাঙ্গ শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন। নিম্নে কোডের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো:

১. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারালয় প্রতিষ্ঠা: কর্নওয়ালিশের কোডের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ। এর মধ্যে জেলা কালেক্টরগণ একাধারে রাজস্ব প্রশাসক, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। কর্নওয়ালিশ এ প্রথা বিলুপ্ত করে প্রতি জেলায় একজন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ করেন।

২. কালেক্টরদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন: লর্ড কর্নওয়ালিশ তার কোডে উল্লেখ করেন যে, প্রতি জেলায় পূর্বের – মতো একজন কালেক্টর থাকবেন। তবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রশাসনিক কার্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। জেলার দেওয়ানি ন আদালত তাকে আইনগত সহায়তা দিবে।

৩. উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতি অনুসরণ: লর্ড কর্নওয়ালিশের কোডের পূর্ব পর্যন্ত বড় বড় হিন্দুও মুসলিম জমিদাররা তাদের মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় জ্যেষ্ঠ পুত্রকে উত্তরাধিকার র মনোনীত করতেন। কর্নওয়ালিশ এ প্রথা বিলুপ্ত করে জমিদারের ক্ষেত্রে হিন্দু বা মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে উত্তরাধিকার মনোনীত করার বিধান চালু করেন।

৪. রাজস্ব আদায়ের জন্য নিলামে জমি বিক্রি: কর্নওয়ালিশের কোডে বলা হয় যে, কোনো জমিদারের রাজস্ব বাকি পড়লে ঐ জমিদারের অধীনস্ত জমি আংশিক বা সম্পূর্ণ বিক্রি করে আদায় করা যাবে। আরো বলা যায় যে, এর বিরুদ্ধে কোনো আদালতেই মামলা করা যাবে না।

৫. প্রফেশনাল উকিল নিয়োগ : পূর্বে আদালতে যেকোনো ব্যক্তি উকিলের কাজ করতে পারত। সে প্রথা বন্ধ করে আইনকে পেশা হিসেবে গ্রহণের এবং পেশাদার উকিলের সাহায্যে আদালতে মামলা পরিচালনার নিয়ম করা হয়। মক্কেলদের যেন উকিলরা শোষণ করতে না পারে সেজন্য উকিলের ফি বেঁধে দেয়া হয় এবং সেই ফি মক্কেল থেকে আদালত কর্তৃক সংগ্রহ করার আইন করা হয়।

৬. দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদলত গঠন: দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত বিচার পরিচালনা করবে। ইউরোপীয় বিচারককে মুসলিম ও হিন্দু আইন বিষয়ে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক আদালতে একজন করে মুসলমান ও হিন্দ আইন অফিসার নিয়োগ করা হয়।

৭. প্রজাদের দৈহিক নির্যাতন নিষিদ্ধ: বকেয়া খাজনা আদায়ের জন্য চিরাচরিত প্রথায় প্রজাদের দৈহিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয় এবং জমিদারদের সমস্ত দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য বল প্রয়োগের আশ্রয় না নিয়ে আদালতের আশ্রয় নেবার জন্য নিয়ম করা হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কর্নওয়ালিশ কোডের সব আইন ও প্রতিষ্ঠান মূলত শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে প্রতিষ্টিত হয়। সেটি হচ্ছে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে আইন দ্বারা ঘোষণা করা হয় এখন থেকে জমির একমাত্র মালিক জমিদার। জমিদার তার ইচ্ছে মতো জমি বিক্রয় করতে পারে, দান করতে পারে, বন্ধক রাখতে পারে। সরকারকে দেয় জমিদারি রাজস্বের আয় কম বৃদ্ধি হবে না। চিরকালের জন্য স্থির করা হলো এবং ভবিষ্যতে কোনো সরকার এ নিয়মে পরিবর্তন আনতে পারবে না।