অথবা, খিলাফত আন্দোলনকে কৃষক আন্দোলন বলা হয় কেন?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে খিলাফত অসহযোগ আন্দোলনে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। এ আন্দোলন ভারতের শহরে ও গ্রামাঞ্চলে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি করেছিল। নানাবিধ কারণে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়। তথাপি এ আন্দোলন পরবর্তীকালে ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের এক বৃহত্তর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছিল।
কৃষক আন্দোলন : অনেকে এ আন্দোলনকে কৃষক আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস নেতারা বিভিন্ন বক্তৃতায় কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। খিলাফত নেতারা কৃষকদের বুঝিয়েছিলেন কংগ্রেসের নেতৃত্বে স্বরাজ আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হলে একদিকে দারিদ্র ও দুর্দশা দূর হবে এবং অন্যদিকে, খলিফার প্রতি ইংরেজদের অবিচারের প্রতিশোধ নেয়া যাবে। বাংলায় চিত্তরঞ্জন, মওলানা আকবর খান, যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত প্রমুখ নেতারা গ্রামে-গঞ্জে মুসলমান কৃষকদের বুঝিয়েছেন খিলাফত আন্দোলন কোনো ধর্মীয় প্রচারের প্রতিফলন নয়; সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। সিদ্ধার্থ গুহ রায় ও সুরঞ্জন চক্রবর্তী এ সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে ১৯১৮ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে খারাপ, ফলন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পাটের মূল্য হ্রাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা, কলেরা প্রভৃতি মহামারির প্রাদুর্ভাব ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল বাংলার জাতীয়তাবাদী নেতারা। বাংলার খিলাফত নেতাদের কাছে তুরস্কের খলিফার পুনর্বাগণ অপেক্ষা উপরোক্ত আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধান অনেক বেশি জরুরি ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, খিলাফত আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের প্রথম প্রত্যক্ষ আন্দোলন। এ আন্দোলন ব্যর্থ হলে ও ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির ইতিহাসে খিলাফত আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ আন্দোলন ছিল মূলত গণজাগরণ।