অথবা, খিলাফত আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ কর।
ভূমিকা: খিলাফত আন্দোলন ভারত উপমহাদেশের প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। হিন্দু ও মুসলমানরা একই মঞ্চে এসে এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশ নেয়। যদিও শেষপর্যন্ত এ আন্দোলন সফল হয়নি। কিন্তু এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হয় তা পরবর্তীকালে বহু আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে।
খিলাফত আন্দোলনের প্রকৃতি: খিলাফত আন্দোলনের প্রকৃতি নিয়ে কয়েক ধরনের মত রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্ক আলোচনা করা হলো:
১. স্বরাজ আন্দোলন: একদল ঐতিহাসিক খিলাফত আন্দোলনকে সাম্রাজ্যেবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করেন। ঐতিহাসিক মুশিরুল হাসান এমত সমর্থন করেছেন। খিলাফত আন্দোলনের নেতা মওলানা আবুল কালাম আন্দোলনের নেতা মওলানা আবুল কালাম আহদি মওলানা মোহাম্মদ আলী নিজেরাও স্বীকার করেছেন প্রাথমিক ভাবে খিলাফতের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্ক সাম্রাজ্যের মুক্তি। মের্ভাসের চুক্তি ভারতীয় মুসলমানদের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরোধী চেতনা বাড়িয়ে তুলে।
২. কৃষক আন্দোলন : অনেকে এ আন্দোলনকে কৃষক আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে। মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস নেতারা বিভিন্ন বক্তৃতায় কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। খিলাফত নেতারা কৃষকদের বুঝিয়েছিলেন কংগ্রেসের নেতৃত্বে স্বরাজ আদায়ের লড়ায়েই সামিল হলে একদিকে দারিদ্র ও দুর্দশা দূর হবে এবং অন্যদিকে খলিফার প্রতি ইংরেজদের অবিচারের প্রতিশোধ নেয়া যাবে। বাংলায় চিত্তরঞ্জন, মওলানা আকবর, যতন্দ্রী মোহন সেনগুপ্ত প্রমুখ নেতারা গ্রামে গঞ্জে কৃষকদের বুঝিয়েছেন খিলাফত আন্দোলন কোনো ধর্মীয় প্রচারের প্রতিফলন নয়, সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।
৩. ধর্মীয় আন্দোলন : একদল ঐতিহাসিক মনে করেন খিলাফত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ধর্মীয়। তুরস্কের সুলতান বা খলিফার হৃত মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ভারতের স্বাধীনতা নয়। খলিফার মর্যাদা রক্ষাই উদ্দেশ্য। খিলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মুসলমান ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত সম্প্রদায়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ মুসলিম লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এর সঙ্গ থেকে দূরে ছিলেন। অন্যদিকে চিত্তরঞ্জন দাস, লালা লাজত্য রায় বা তিলক সরাসরি গান্ধীর খিলাফত প্রীতির প্রতিবাদ না করলেও সমর্থন করেননি উলেমাদের সমর্থনে এ আন্দোলন ধর্মীয় রূপ নেয়। তারা ইসলামের আচার- অনুষ্ঠানের উপর গুরুত্ব দিতেন। ফলে ভারতীয় মুসলমানদের বিচ্ছিন্নতাবোধও এক ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রবল হয়ে ওঠে। ১৯২৪ সালে তুরস্কে খিলাফত রহিত হলে ভারতে এ আন্দোলনের অবসান ঘটে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, জওহরলাল নেহেরু তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারা প্রসারের ফলে মুসলিম সমাজে মোল্লা ও মৌলবীদের প্রভাব ও মর্যাদা হ্রাস পাচ্ছিল কিন্তু আন্দোলনের ফলে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। খিলাফত আন্দোলন ছিল মূলত ধর্মীয় আন্দোলন। – খিলাফত প্রশ্নটি চাপা পড়ে গেলে আন্দোলনের অবসান ঘটে।