খিলাফত আন্দোলনের ব্রিটিশদের রচিত স্যাভার্স চুক্তির শর্তাবলি আলোচনা কর।

অথবা, খিলাফত আন্দোলন মিত্রশক্তিদের দ্বারা রচিত স্যাভার্স চুক্তির শর্তসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ১৯১৬ সালে জাতীয় প্রশ্নে ভারতবাসী আবার ঐক্যবদ্ধ হন। এভাবে দেখা যায় যে ১৯১৯ এর পর কংগ্রেস ১৯১৯ সালের আইনের প্রতিবাদে এক আন্দোলনের ডাক দেন, যা অসহযোগ আন্দোলন নামে খ্যাত। অন্যদিকে ১ম বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে মুসলমানরা তুরস্কের খিলাফত রক্ষা করার জন্য যে আন্দোলন গড়ে তোলেন তা খিলাফত আন্দোলন নামে খ্যাত।

স্যার্ভাস চুক্তি: ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হলে এবং জার্মানিসহ তুরস্ক পরাজিত হলে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের দেয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হননি। যুদ্ধ শেষে জার্মানি তুরস্ক অপশক্তি পরাজয় ঘটলে মিত্রশক্তিবর্গ স্যাভার্সে এক চুক্তি সম্পাদন করে। এ চুক্তি তুরস্ক তথা সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অপমানজনক। এর ফলে তুরস্কের মর্যাদাহানী হয়। ব্রিটেনসহ মিত্র শক্তিদের দ্বারা রচিত। স্যাভার্স চুক্তির শর্তানুসারে-

১. তুরস্ক তার অধিকৃত এলাকা হারায়।

২. তুরস্কের মূল ভূখণ্ড ছিন্ন-বিছিন্ন করা হয়। স্মানী, থ্রেস ও আনাতোলিয়া তুরস্কের হাত ছাড়া হয় এবং সেখানে মিত্রশক্তির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

৩. খিলাফত ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয় এবং ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি আঘাত হানে। ফলে ভারতবর্ষের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের কারণে তুরস্কের অখণ্ডতা বজায় রেখে খিলাফত ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার মানসে ম্যাভার্স চুক্তির শর্তাবলির প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনপূর্বক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ ব্রিটিশ সরকারকে অভিযুক্ত করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯২০ সালে এক দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটিই খিলাফত আন্দোলন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পরোক্ষ কারণগুলো আন্দোলনের জন্য মুসলমানদের মনে ঘৃণা, বিদ্বেষ ইত্যাদি সৃষ্টি করার জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল সত্য, কিন্তু এ কারণগুলো খিলাফত আন্দোলনের বাস্তবমুখী গতিধারা নির্ধারণে ছিল নীরব। তুরস্কের প্রতি ম্যাভার্স চুক্তির হঠকারিতামূলক শর্তগুলো এবং মুসলমান ধর্মীয় আবেগাপ্লুত ধ্যানধারণা মূলত খিলাফত আন্দোলনের যথার্থ কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।