অথবা, খিলাফত আন্দোলন চলাকালে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই মুসলমানরা ব্রিটিশ শাসনকে গ্রহণ করতে পারেনি। কাজেই যখন সুযোগ পেয়েছে তখনি ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় ঘটলে খিলাফতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তুরস্কের খিলাফত রক্ষার্থে উপমহাদেশের মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। খিলাফত আন্দোলন এক নবজাগরণ সৃষ্টি করে।
নিম্নে খিলাফত আন্দোলন চলাকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো:
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: ভারতীয় মুসলমানরা তুরস্কের খিলাফতের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয় এবং সুলতানদের ধর্মীয় নেতার আসনে সমাসীন করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্কের পতন ঘটলে মিত্রবাসী কর্তৃক তুরস্ক সাম্রাজ্য ও তুরস্কের খিলাফত রক্ষার্থে ভারতীয় মুসলমানগণ আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালে ১৯২১ সালে দক্ষিণ ভারতের মারবারে মুসলমানগণ বিদ্রোহী হয়ে কয়েকজন ইউরোপীয় এবং বহু হিন্দুকে হত্যা করেন। ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর প্রদেশের গোরাক্ষপুরের কাছে চৌরিচৌরা থানায় একদল হিংস্র জনতা ২১ জন পুলিশ কর্মীকে জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করে। ১৯২১-১৯২২ সালে মহররম উপলক্ষে ও ১৯২২-১৯২৩ সালে বাংলা ও পাঞ্জাবে ১৯২৩ সালে অমৃতসর, মুলতান, পাঞ্জাব, সিন্ধু, মোবাদবাদ, মিরাট, আজমীর এলাহাবাদ প্রভৃতি স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধে যায়।
এসব ঘটায় গান্ধীজি ভীষণ মর্মাহত হন এবং অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার সিন্ধান্ত দেন। এসব ঘটনার ফলে খিলাফত আন্দোলন এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে খিলাফত আন্দালন তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে। ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেন এবং খিলাফত আন্দোলনের নেতাদের বন্দি করেন এবং গান্ধীজিকেও বন্দি করেন। ফলে দেখা যায় নেতৃত্বে শূন্যতা। ফলে আন্দোলন অগ্রসর হতে পারেনি। তবু ব্রিটিশ বিরোধী পরবর্তী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়। যে হাতিয়ার প্রয়োগ করে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছিল এবং অগণিত নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করেছিল। তবে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছিল।