খিলাফত আন্দোলন প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

অথবা, খিলাফত আন্দোলনে প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে লিখ।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে খিলাফত আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা খিলাফত আন্দোলনকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নবজাগরণ বলে আখ্যায়িত করা যায়। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিদেশি শাসনের বন্ধন ছিন্ন করে মুসলমানদের নিজস্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল খিলাফত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

খিলাফত আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া: ব্রিটিশ ভারতে খিলাফত আন্দোলনের ফলাফল খুব বেশি শুভ হয়নি। বরং এ আন্দোলনের ফল বয়ে নিয়ে এসেছিল ভারতীয় মুসলমানদের কারণে এক ব্যর্থতার গ্লানি।’ এর প্রতিক্রিয়া নিচে দেয়া হলো:

১. হতাশার সৃষ্টি হয়: খিলাফত আন্দোলনের দরুন মুসলমানদের উন্নতি ও অগ্রগতি ভীষণভাবে ব্যাহত হয়। ফলে মুসলমানদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়।

২. শক্তিকে দুর্বল করে: এ আন্দোলন মুসলমানদের বিবেক বুদ্ধি, সামর্থ্য, আর্থিক ও মানসিক শক্তিকে নিস্তেজ করে দেয়।

৩. সম্প্রীতি নষ্ট করে : এ আন্দোলন ভারতে হিন্দু- মুসলিম সম্প্রীতি নষ্ট করে মিলনের সম্ভাবনাকে কুঠারাঘাত করে। ফলে হিন্দু মুসলিমদের ঐক্য ও মিলনের সম্ভাবনা চিরদিনের মত তিরোহিত হয়।

৪. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি : করে খিলাফত আন্দোলন হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টি করে। ফলে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।

৫. রুদ্র রোষে পড়েন : এ আন্দোলনের ফলে মুসলমানগণ ইংরেজদের রুদ্ররোষে পড়ে অমানুষিক লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা ভোগ করে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

৬. অর্থনৈতিক জীবন ব্যবস্থা বিপর্যন্ত: খিলাফত আন্দোলনের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের অর্থনৈতিক জীবন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

৭. গান্ধীর অস্বীকৃতি: সম্মিলিত খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান নেতা মহাত্মা গান্ধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিদ্বেষ করে চৌরাচৌরার উন্মত্ত জনতার হটকারিতায় স্তম্ভিত হয়ে নেতৃত্বে দানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে এ আন্দোলন ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যায়।

৮. সহিংসতা: খিলাফত আন্দোলনের ব্যর্থতার মূল কারণ কংগ্রেস কর্তৃক আইন অমান্য আন্দোলন ও সহিংসতা উত্তর প্রদেশের চৌরাচিরার উন্মত্ত জনতা কর্তৃক থানায় অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানি ঘটায় অহিংসনীতির প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধী আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এর ফলে আন্দোলনের গতি ক্রমাগত নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, তুরস্কের এক বিপ্লবী দল বীর যোদ্ধা মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করে। মোস্তাফা কামাল পাশা ১৯২৩ সালে তুরস্ক সালতানাত ও খিলাফত ভেঙে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে ভারতেও খিলাফত আন্দোলনের যৌক্তিকতা নষ্ট হয়ে যায়। ১৯২৪ সালে খিলাফত আন্দোলনের পূর্ণ অবসান ঘটে।