অথবা, খিলাফত আন্দোলনের পটভূমি সম্পর্কে লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশরা ব্যবসায় উদ্দেশ্য ভারতবর্ষে এসে ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। ফলে দেখা যায় ভারতের শাসনতান্ত্রিক জটিলতা। এই জটিলতা নিরসনে এক পর্যায়ে ভারতে দলগত বিভেদ দেখা দেয়। ১৯১৬ সালে ভারতবাসী জাতীয় প্রশ্নে আবার ঐক্যবদ্ধ হন। অন্যদিকে ১ম বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারতের মুসলমানরা তুরস্কের খিলাফত রক্ষা করার জন্য যে আন্দোলন গড়ে তোলে ইতিহাসে সেটিই খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত। তবে ১৯২০ সালে এ আন্দোলন নামে পরিচিত। তবে ১৯২০ সালে এ আন্দোলন পরিপূর্ণভাবে শুরু হলে ও ১৯১৪ সাল থেকে এ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপট:
ইসলাম ধর্মে খিলাফতকে অত্যন্ত মর্যাদাকর একটি ধর্মে হিসেবে বিবেচনা করা হত। ইসলাম ধর্মে দেখা যায়, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পর ৬৩২-থেকে অর্থাৎ হযরত বক্কর (রাঃ) থেকে হযরত আলী (রাঃ) এর খিলাফত কাল ৬৬১ পর্যন্ত ছিল। এরপর উমাইয়া খিলাফত প্রায় ৬৬১ থেকে ৭৫০ পর্যন্ত এবং সর্বশেষ ৭৫০ থেকে ১২৫৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এই খিলাফতকে মুসলমানরা দিক নির্দেশনা এবং অত্যন্ত গুরুজনপূর্ণ হিসেবে ভাবত। এবং খিলাফত মুসলমানদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা ছিল। মুসলমানরা খিলাফত মর্যাদা রক্ষায় সব সময় তৎপর ছিল। এমনি এক সময়ে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এ সময়ে তুরস্ক জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করলে ব্রিটিশ সরকার তুরস্কের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কিন্তু ইসলাম ধর্মে তুরস্কের খিলাফতকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হত। এ সময়ে ভারতীয় মুসলমানরা ধর্মীয় দিক থেকে তুরস্কের অনুগত এবং রাজনৈতিক দিক থেকে ব্রিটিশদের অনুগত ছিল ফলে মুসলমানরা উভয় সংকটে পড়ে যায়। ফলে এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে মুসলমানরা একটি লিখিত দাবি পেশ করে খিলাফত সংক্রান্ত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ তখন প্রতিশ্রুতি দেন যে এ যুদ্ধ হলো তুরস্কের বিরুদ্ধে কিন্তু খিলাফতের বিরুদ্ধে নয় এছাড়া খিলাফতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে তিনি কথা দেন। কিন্তু ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে তুরস্ককে খণ্ড করে খোলা হয়। এতে দেখা যায় ব্রিটিশ সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু, যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ সরকার বলেন খিলাফতের মর্যাদা রক্ষা এটা তাদের আওতার বাইরে তাই ব্রিটেনের কিছু করার নেই। এছাড়াও মুসলমানদের আর একটি দাবি ছিল বিভিন্ন এলাকার পবিত্র স্থানসমূহ সম্পূর্ণভাবে তুরস্কের খলিফার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু দেখা যায় যুদ্ধের পর শর্তানুযায়ী তুরস্ক তার নিজস্ব আবাসভূমি থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্স তুরস্ক সাম্রাজ্যের এশিয়া অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় এবং সুলতানকে একজন কয়েদীর ন্যায় ফেলে রাখেন। যার ফলে ভারতীয় মুসলমানরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ বিশ্বাসঘাতকতায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময়ে ভারতের মুসলমানরা দাবি আদায়ের জন্য এক সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। ১৯১৯ সালের ২৪ নভেম্বর দিল্লিতে এ. কে. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে খিলাফত কনফারেন্সের প্রথম সভা হয়। সম্মেলনে অনেকগুলো দাবি উত্থাপন করা হয়।
১. ব্রিটিশ পণ্য এখন থেকে বর্জন করা হবে।
২. মুসলমানদের প্রতি আবেদন জানানো হয় যে, তারা যেন ব্রিটিশ সরকারের বিজয় উৎসবে অংশগ্রহণ না করে।
৩. খিলাফতের ব্যাপারে দাবি না মানলে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে ভারতীয় মুসলমানরা খিলাফত রক্ষার জন্য এ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের অধিবেশনের সিদ্ধান্তের সাথে গান্ধীজি একাত্মতা ঘোষণা করেন। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন মওলানা মুহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলী প্রমুখ এবং মওলানা আবদুল বারী। আর হিন্দু ও মুসলমান যৌথ উদ্যোগে এ আন্দোলন আরো বেগবান হয়।