খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, খিলাফত আন্দোলন কী সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, খিলাফত আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন একটি অধিক আলোচিত বিষয়। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে ভারতীয় মুসলমানরা ব্রিটিশ শাসনকে গ্রহণ করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এর ফলে মুসলমানদের অধিকার যখনই খর্ব হয় তখনই মুসলমানরা সুযোগ বুঝে আন্দোলন শুরু করে। এই সময়ে আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ সরকার তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সে সময়ে ভারতে অবস্থানরত মুসলমানরা এক বিপজ্জনক অবস্থায় পড়েছিল। কারণ রাজনৈতিক কারণে তারা ব্রিটিশদের প্রতি এবং ধর্মীয় কারণে তারা তুরস্কের প্রতি অনুগত ছিলেন। যুদ্ধের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে নিজ আয়ত্তে আনার জন্য বলেছিল যে এ যুদ্ধ শুধুমাত্র তুরস্ক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সুলতানদের বিরুদ্ধে নয়। সেজন্য পবিত্র স্থানগুলোর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা হবে। ফলে এই প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করে তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে যুদ্ধ শেষে দেখা যায়, ব্রিটিশ সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। যার ফলে ভারতীয় মুসলমানরা তুরস্কের খিলাফতের মর্যাদা রক্ষার্থে একটি আন্দোলন গড়ে তোলে, যা ইতিহাসে খিলাফতের আন্দোলন নামে পরিচিত।

খিলাফত আন্দোলন: ইসলাম ধর্মে খিলাফত ছিল সবচেয়ে সম্মানজনক একটি বিষয়। ইসলামের ইতিহাসে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী (সঃ) এর পর নবুয়াতের মাপকাঠির আলোকে এ খিলাফতের মর্যাদা ৬০২-৬৬১ সাল পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। আবার উমাইয়া খিলাফত ছিল ৬৬১-৭৫০ পর্যন্ত এরপর আব্বাসীয় রাজতান্ত্রিক খিলাফতের শাসন ছিল ৭৫০-১২৫৮ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে মুসলমানরা সব সময় খিলাফত রক্ষার্থে তৎপর ছিল। আর লড়াই করতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করেন নি। আর এই খিলাফতকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় উপমহাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। কারণ ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পুরো পৃথিবী দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যায় অর্থাৎ অক্ষ শক্তি ও মিত্র শক্তি। এই যুদ্ধে তুরস্ক জার্মানিকে সমর্থন করে নানা কারণে। যার দরুণ ব্রিটিশ সরকার ও তুরস্কের বিরুদ্ধে অবসান নেয় কারণ ব্রিটিশদের শত্রু ছিল জার্মানি ফলে ভারতীয় মুসলমানরা উভয় সংকটে পড়ে এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
মুসলমানরা প্রথম অবস্থায় বুঝতে পারছিল না তাদের কি করা উচিত। এক পর্যায়ে তাই তারা ইংরেজ সরকারের কাছে তুরস্কের খিলাফত রক্ষার দাবি সংক্রান্তে একটি দাবি পেশ করেন। সে সময়ে ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের লয়েড জর্জ তখন প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তীতে বিটিশ সরকার এক পর্যায়ে বলে উঠে যে, এটা তাদের একার আওতায় বাইরে। সুতরাং ব্রিটিশদের কিছুই করার নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের ঘোষণায় ভারতবর্ষের মুসলমানরা তুরস্কের খিলাফতের মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার দায়ে ব্রিটিশ সরকারকে চাপ দেন এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই খিলাফত আন্দোলনে নেতৃত্বে দেন মওলানা মুহাম্মদ আলী। ১৯১৯ সালে ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুসলমানদের পরিচালিত এই আন্দোলনকে খিলাফত আন্দোলন বলা হয়। ১৯১৯ সালে ২৪ নভেম্বর একে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে খিলাফত কনফারেন্সের প্রথম সভা হয়। এখানে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই প্রস্তাবগুলোকে সঙ্গে গান্ধীজি একত্মতা ঘোষণা করেন। যার ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের এক যৌথ সভায় গান্ধী খিলাফত কনফারেন্সের সাথে সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের শাসনামলে উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী বহু আন্দোলনের সূচনা হয়। ব্রিটিশদের নানা অত্যাচার নিপীড়নের ফলে খিলাফত আন্দোলন তেমনি এক আন্দোলন ছিল। যদিও এ আন্দোলন পরবর্তীতে ব্যর্থ হয় তথাপি ইতিহাসে এ আন্দোলনের তাৎপর্য অপরিসীম। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা মুহাম্মদ আলী, মওলানা আবদুল বারী, মওলানা শওকত আলী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।