খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে গবেষকদের মতামত সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে গবেষকদের মতামত কী ছিল? উল্লেখ কর।

উত্তর: ভূমিকা: ইসলামের ইতিহাসে খিলাফত একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিক খুদারী বলেন, খিলাফত ছিল ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত পার্থিব প্রধানের পদ ইবনে খালদুন মন্তব্য করেন যে, খিলাফত হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মহানবীর মিশনের প্রতিনিধিত্ব করে অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাগণ উমাইয়া আব্বাসীয় ও মামলুক শাসকগণ এবং ১৯২৪ সালে মোস্তাফা কামাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তি গোষণা না করা পর্যন্ত সকল অটোম্যান সুলতান খলিফা হিসেবে স্বীকৃত হতেন।

গবেষকদের মতামত: ভারতীয় খিলাফত আন্দোলনের চরিত্র সম্পর্কে গবেষকদের মধ্যে বিভিন্ন মত দেখা যায়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. প্যান ইসলামীয় আন্দোলনের অঙ্গ: নিমিজার প্রভৃতি গবেষকদের মতে, খিলাফত আন্দোলন ছিল মূলত প্যান ইসলামীয় আন্দোলনের অঙ্গ। জামালউদ্দিন আল আফগানী প্রভৃতি মুসলিম নেতা খলিফাকে বিশ্বের সকল মুসলিমদের গুরু এবং ইসলামীয় আদর্শের প্রতীক রূপে প্রচার করেন। কেদুরী নামে ঐতিহাসিক বলেন যে, জামালউদ্দিন আল আফগানীর এ প্রচার পশ্চিম এশিয়া ও ভারতে করা হয়। এর ফলে ভারতীয় মুসলমানরা তুরস্কের সুলতান খলিফার ভবিষ্যৎকে তাদের ধর্মীয় – ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থ হিসেবে ভাবতে থাকে। মৌলানা আবুল কামাল আজাদ হযরত মৌহানী, মুহম্মদ আলী প্রমুখ আফগানীর জেহাদী ভাবধারায় প্রভাবিত হন।

২. খিলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয় মুসলিমের মধ্যে ঐক্য স্থাপন: খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে অপর একটি মত হলো যে, খিলাফত আন্দোলন নিছক তুর্কী সুলতানের প্রতি ধর্মীয় আনুগত্য করে শুরু হয়নি। ভারতীয় মুসলিম নেতারা এ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয় মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করার সুযোগ পান। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মুসলিমরা ভাষা ও অঞ্চলের বিভেদ বশতঃ বিভক্ত ছিলেন। উর্দুভাষী মুসলিমরা নিজেদের ইসলামীয় সংস্কৃতির ন্যায্য প্রতিনিধি বলে দাবি করতেন। ইসলামের পবিত্র ঐতিহ্য কুরআন শরীফ মক্কায় হজ্জ ও খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রচার দ্বারাই ইসলামীয় ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। গেইল, মিনল্ট প্রভৃতি গবেষক এ মত পোষণ করেন।

৩. খিলাফত আন্দোলনে মুসলিম পুনরুজ্জীবনবাদ: এর একটি মত হলো যে, খিলাফত আন্দোলন ছিল রক্ষণশীল গোঁড়া মোল্লা ও মৌলভীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মান্ধতামূলক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। ওয়াবি আন্দোলনের মতই খিলাফত আন্দোলন প্রথমে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হলেও পরে সাম্প্রদায়িক চরিত্র গ্রহণ করে। খলিফাকে বিপন্ন ইসলামের প্রতীক মনে করে ওলামারা এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুদ্ধিজীবী মুসলমানরাও এ আন্দোলনে সামিল হন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় মুসলিমরা তুরস্কের সুলতান বা খলিফাকে ভবিষ্যৎকে তাদের ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থ হিসেবে ভাবতেও শুরু করে। তুরস্কের সুলতানকে রক্ষার জন্যে ভারতে খিলাফত আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী ছিল। তবে সফল না হওয়ার কেবল অযথা হতাহত হয় মাত্র।