অথবা, গণতন্ত্রের সফলতার কয়েকটি শর্ত উল্লেখ কর।
অথবা, গণতন্ত্রের সফলতার উল্লেখযোগ্য শর্তসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র এখনও পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে নি। এর পিছনে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থক প্রয়োগের জন্য এর কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
গণতন্ত্রের সফলতার শর্তসমূহ: নিম্নে গণতন্ত্রের সফলতার শর্তগুলো আলোচনা করা হল:
১. গণতান্ত্রিক জনগণ: গণতন্ত্রকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে সর্বাগ্রে যে জিনিসটির প্রয়োজন তাহল জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক ধারণার উপস্থিতি। Ivor Brown গণতান্ত্রিক ধারণাকে ‘An action of will’ বলে উল্লেখ করেছেন। গণতান্ত্রিক চেতনাই জনগণকে শাসনকার্যে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তার সাফল্যের জন্য নাগরিকদের কাছে বিশেষ যোগ্যতাও দাবি করে। এর পরিবর্তে নাগরিকরাও সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান পায়। লর্ড ব্রাইস মন্তব্য করেছেন, “No government demands so much from citizens as democracy and nonages so much back.”
২. একাধিক রাজনৈতিক দল : গণতন্ত্রের সাফল্যে একাধিক রাজনৈতিক দল এবং বিরোধীদলের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। এছাড়া একটি শক্তিশালী বিরোধীদল থাকলে সরকার সবসময় সতর্ক থাকে এবং জনস্বার্থ সাধনে আত্মনিয়োগ করতে বাধ্য হয়।
৩. গণতান্ত্রিক পরিবেশ: মানুষের ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের উপযোগী পরিবেশই হল গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এর জন্য প্রয়োজন সকল সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি ও সংরক্ষণ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং অন্যায় ও শোষণ গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করে। সুতরাং সমাজতান্ত্রিক তথা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া গণতন্ত্রের সাফল্য সুনিশ্চিত হতে পারে না।
৪. আইনের শাসন: গণতন্ত্রের সফলতার একটি অন্যতম শর্ত হল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনের চোখে সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে। এতে সকলে সমান অধিকার ভোগ করতে পারবে এবং গণতন্ত্র সফল হবে।
৫. যোগ্য নেতৃত্ব: রাজনৈতিক নেতৃবর্গের ন্যায়নীতি ও বিবেকবোধের উপর গণতন্ত্রের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভরশীল। স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী নেতৃত্ব গণতন্ত্রের কবর রচনা করে। এছাড়া দুর্বল নেতৃত্বের কারণে বহু দেশেই গণতন্ত্র আজ বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রীয় নেতাগণের ন্যায়পরায়ণতা, সততা, উদারচিত্ত, বিবেকবান প্রভৃতি গুণাবলি গণতন্ত্রের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য হয়।
৬. উপযুক্ত শিক্ষা: শিক্ষার ব্যাপক বিস্তারকে গণতন্ত্রের সাফল্যের মূলমন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। গণতন্ত্র হল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের শাসন। আর জনগণের অধিকাংশ যদি অশিক্ষিত হয় তবে তাদের পক্ষে যোগ্য ও বিজ্ঞ প্রতিনিধি নির্বাচিত করা সম্ভব হয় না। ফলে অজ্ঞ ও অযোগ্য ব্যক্তির হাতে পড়ে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সেজনা বলা হয়, প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থায় সাফল্যের জন্য জনগণের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার প্রয়োজন।
৭. জনমত: গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য আর একটি অপরিহার্য শর্ত হল সুস্থ, সবল ও সদাজাগ্রত জনমত। সদাসত্বক এবং সক্রিয় জনমত সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ করে এবং সরকারকে গণমুখী করে। তাই গণতন্ত্রের সাফল্য জনমতের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
৮. সহিষ্ণুতা: পরমত সহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের প্রাণ। গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। এ শাসনব্যবস্থাকে সফল করতে হলে সংখ্যালঘিষ্ঠরা যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন মেনে নেবে, তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠকেও সংখ্যালঘু তথা বিরোধীদলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহিষ্ণু মনোভাব পোষণ করতে হবে। এজন্য বলা হয়ে থাকে, “Majority must be granted, Minority should be respected,”
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, যদি যথাযথভাষে কার্যকর করা যায় তাহলে গণতন্ত্র সফল করা যাবে।