অথবা, গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জন্য স্থাপিত হয় একটি কেন্দ্রীয় সরকার। কোম্পানির তিনটি প্রেসিডেন্সি মাদ্রাজ, বোম্বে ও কলকাতা নিয়ে এ কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলকাতা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী। তাই কলকাতায় একটি কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় – প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর দুইটি বিভাগ ছিল। প্রথমটি, পাবলিক ডিপার্টমেন্ট, দ্বিতীয়ত সিক্রেট ডিপার্টমেন্ট।
হেস্টিংসের শাসনামলে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অবস্থা :
১৭৭২ থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত ওয়ারেন হেস্টিংসের কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অবস্থা ছিল নিম্নরূপ:
(ক) কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা: কোম্পানির কেন্দ্রীয় সরকারের গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব দেয়া হয় ওয়ারেন হেস্টিংসকে। মাদ্রাজ ও বোম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে দুজন কাউন্সিল নিযুক্ত করা হয়। সকল প্রেসিডেন্সির প্রধান হলেও তিনি মূলত ব্যস্ত থাকতেন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্যা নিয়ে।
(খ) কেন্দ্রীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা: গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ সালের অ্যাক্টের আলোকে একটি কেন্দ্রীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের পৃথক দুটি বিভাগ ছিল। নিম্নে এ বিভাগগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. পাবলিক ডিপার্টমেন্ট: কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের পাবলিক ডিপার্টমেন্টের কাজগুলো হলো: (ⅰ) কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিপিং পরিচালনা করা, (ii) আয় ও ব্যয়ের হিসাব তদারক, (iii) নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, পদচ্যুতি দেখাশোনা করা, (iv), দেওয়ানি শাসন পরিচালনা করা।
২. সিক্রেট ডিপার্টমেন্ট: সিক্রেট ডিপার্টমেন্টের কাজগুলো ছিল- (i) দেশীয় রাজন্যবর্গের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, (ii) যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালনা ও (iii) শান্তিচুক্তি সম্পাদন করা প্রভৃতি।
৩. সেক্রেটারি বা সচিব: কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের দুটি বিভাগের জন্য একজন মাত্র সেক্রেটারি বা সচিব নিয়োগ করা হয়। সাধারণত ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের সিনিয়র সদস্য থেকে সচিব নিয়োগ করা হতো।
৪. সাব-সেক্রেটারি: কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের দুটি ডিপার্টমেন্টের প্রতিটিতে একজন করে উপসচিব বা সাব-সেক্রেটারি নিয়োগ করা হয়। উপসচিব সচিবালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সচিবকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন।
৫. ফরেন সেক্রেটারি : একদিকে সরকারি কাজের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালে আরেকটি সচিবের পদ সৃষ্টি করেন। বৈদেশিক বিষয় দেখাশুনা করার জন্য ১৭৮৩ সালে ফরেন ডিপার্টমেন্ট নামে একটি নতুন সচিবালয় খোলা হয়।
৬. সেক্রেটারি জেনারেলের পদ সৃষ্টি: পিটের ইন্ডিয়া অ্যাক্ট ১৭৮৪ প্রণীত হওয়ার সময়ে প্রেসিডেন্সি সরকারের সেক্রেটারিয়েটের পরিসর ছিল তিনটি বিভাগ ও ৩ জন সেক্রেটারি নিয়ে। এ আইনের অধীনে সেক্রেটারি পদ বিলুপ্ত করে বাৎসরিক পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতনে একটি সেক্রেটারি জেনারেলের পদ সৃষ্টি করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড হেস্টিংস ছিলেন কোম্পানির কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ের স্রষ্টা। তিনি সচিবালয়ের বিভিন্ন শাখার মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে সরকার ও জনগণের সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করার প্রয়াস পান। সচিবালয়ের শাখাগুলো প্রশাসনের যন্ত্র হিসেবে কাজ করতে থাকে।