অথবা, গান্ধীজির স্বরাজ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী তথা মহাত্মা গান্ধীর আর্বিভাব একটি চমকপ্রদ ও যুগান্তকারী ঘটনা। ভারতীয় রাজনীতিতে তার হাল ধরার সাথে ভারতীয় আন্দোলনেও জনসাধারণ হাজারো শক্তি ফিরে পায় এবং তা কাজে লাগায়। ফলে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কেঁপে উঠে। এজন্য অনেকে গান্ধীজির আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন যে, যদি তাঁর ন্যায় ব্যক্তির আর্বিভাব ভারতীয় রাজনীতিতে সমকালে না হতো তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্যভাব রচিত হতো।
গান্ধীজির স্বরাজ দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ১৯২৩ সালের মার্চ মাসে এলাহাবাদে মতিলাল নেহেরুর বাসভবনে স্বরাজ দলের প্রথম অধিবেশনের দলের গঠন তন্ত্র, লক্ষ্য ঘোষিত হয়। স্বরাজ দলের সঙ্গে কংগ্রসের বড় ধরনের কোনো নীতিগত পার্থক্য ছিল না। বস্তুত আইনসভা কয়েকটির বিরোধিতা ছাড়া কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো পার্থক্য ছিল না। চিত্তরঞ্জন দাস স্বরাজ দলকে তাই জাতীয় কংগ্রেসের অধীনস্ত একটি দল এবং কংগ্রেসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে অভিহিত করেন। ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ত শাসন অর্জন করাই ছিল স্বরাজ দলের লক্ষ্য তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
১. সরকারকে অকেজো করে তোলা: আইন সভায় প্রবেশ করে এর ভেতরে থেকে সুসংবদ্ধ নিয়মিত ও নিরন্তর সমালোচনা এবং বাধা সৃষ্টি করে সরকারকে অকেজো করে দেয়া এর প্রধান উদ্দেশ্য।
২. ১৯১৯ সালের আইনকে ব্যর্থ করা: ১৯১৯ সালের ভারত আইন অকার্যকর করে। তোলা স্বরাজ দলের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
৩. বাজেট প্রত্যাখ্যান: সরকারি বাজেট প্রত্যাখ্যান করা তাদের লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৪. জাতীয়তাবাদের অগ্রগতিতে সহায়তা: বিভিন্ন দিক উত্থাপন করে জাতীয়তাবাদের অগ্রগতিতে সহায়তা করা।
৫. মহাত্মা গান্ধীর গঠনমূলক কর্মসূচি সহায়ক: মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বের গঠনমূলক কর্মসূচির প্রতি সমর্থন প্রদান।
৬. প্রয়োজনে আইন অমান্য আন্দোলনে সহায়তা : স্বরাজ দলের লক্ষ্য হিসেবে আরো বলা হয় যদি তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় তবে মহাত্মা গান্ধী যদি আইন অমান্য আন্দালন শুরু করেন কোনো দ্বিধা ছাড়া এর প্রতি দলের সমর্থন থাকবে।
স্বরাজ দলের কর্মসূচি: ১৯২৩ সালের দিল্লির বিশেষ কংগ্রেস অধিবেশনে স্বরাজ দল কংগ্রেস সংগঠনে প্রভাব বিস্তার করে। স্বরাজ দলের নেতাদের সঙ্গে বিরোধীদের সমঝোতার ফলে এ অধিবেশনে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাদের ব্যাপারে আপত্তি প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদিকে স্বরাজ দল কংগ্রেসের গঠনমূলক কর্মসূচির সমর্থন করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, গান্ধীজি ছিলেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতবাসীয় অবিসংবাদিত নেতা। অদ্যাবধি ভারতের অপর কোনো নেতা তার মতো এত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন নি। ১৯১৯ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত তিনি জাতির প্রধান নিয়ামক শক্তি। তার নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় আন্দোলন এক সর্বাত্মক গণসংগ্রামে পরিণত হলো এবং সমগ্র দেশ আত্মত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।