ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির দফাগুলো আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের ১১ দফা দাবিগুলো উল্লেখ কর।

উত্তর। ভূমিকা: পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যেসব অন্যায়, অবিচার ও শোষণ নির্যাতন করেছে তার বিরুদ্ধে সর্বদা প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেছে বাঙালি ছাত্রসমাজ। ছাত্রসমাজের ১১ দফা ছিল পাকিস্ত ানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

১১ দফা কর্মসূচি: ১১ দফা কর্মসূচিকে বলা হয় আন্দোলনের প্রাথমিক সূতিকাগার। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো:

১. ক. যেসব কলেজ প্রাদেশিকীকরণ করা হয়েছে, সেগুলোকে বেসরকারি কলেজে পুনঃরূপান্তর।

খ. স্কুল ও কলেজের সংখ্যাবৃদ্ধি।

গ. সরকারি কলেজসমূহে নৈশ বিভাগ প্রবর্তন।

ঘ. শতকরা ৫০% ছাত্র বেতন হ্রাস।

ঙ. বাংলাকে শিক্ষা ও অফিস-আদালতের কাজকর্মের মাধ্যম হিসেবে চালু করা।

চ. ছাত্রদের আবাসিক ব্যয়ের শতকরা ৫০% সাহায্য হিসেবে প্রদান।

ছ. শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি।

জ. অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রবর্তন।

ঝ. মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও মেডিকেল কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স বাতিলকরণ।

ঞ. পলিটেকনিক ছাত্রদের জন্য কনডেন্স কোর্সের সুবিধা প্রদান।

ট. ছাত্রদের ট্রেন ও বাসে ভ্রমণের সুবিধা দান।

ঠ. চাকরির নিশ্চয়তা বিধান। ড. বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিলকরণ ও বিশ্ববিদ্যালসমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান।

ড. জাতীয় শিক্ষা কমিশন ও হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলকরণ।

২. ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন।

৩. ক. সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন আইনসভায় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন।
খ. দেশরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি ও মুদ্রা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দায়িত্বে ন্যস্তকরণ।

৪. প্রত্যেক প্রদেশের জন্য আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ পশ্চিম পাকিস্তানি উপরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন।

৫. ব্যাংক, বিমা ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ।

৬. কৃষকদের কর ও খাজনা হ্রাস।

৭. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও বোনাস প্রদান।

৮. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ।

৯. জরুরি ব্যবস্থামূলক আইন, নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য দমনমূলক আইন বাতিলকরণ।

১০. সিয়াটো সেনটো, পাক মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলকরণ।

১১. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক আসামিসহ সকল রাজবন্দির মুক্তিদান।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১১ দফা দাবির মধ্যে শুধু ছয়দফাভিত্তিক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কথাই ছিল না, এতে ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক সকল শ্রেণির মানুষের শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার দাবিও অন্তর্ভুক্ত হয়। এ কারণে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ বিপুলভাবে সাড়া দেয়।