অথবা, জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম পর্যায় থেকে ভারতীয়রা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে। ব্রিটিশ সরকারও ভারতীয় জনসাধারণকে দমিয়ে রাখার জন্য একের পর আইন পাস করে। কিন্তু এতে দেখা যায় যে, ভারতীয়দের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন হচ্ছে না।’ তাই ভারতীয়রা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দাবি দাওয়া পূরণের জন্য ১৮৮৫ সালে লর্ড ডাফরিনের সমর্থনে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এটাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নামে খ্যাত।
জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ১৮৮৫ সালে মোম্বাইয়ে খ্যাতনামা ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র মহাশয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে কংগ্রেসের প্রাথমিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ঘোষণা দেয়া হয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি নিম্নরূপ:
১. ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ভারতীয়দের মধ্যে যোগসূত্র এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
২. ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ও যোগাযোগের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও প্রাদেশিকতার সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় ঐক্যের পথ প্রশস্ত করা।
৩. শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি চিহ্নিত করে তার সমাধানের পথ নির্ধারণ করা।
৪. আগামী এক বছরের মধ্যে রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা।
এছাড়া অধিবেশনের শেষান্তে সরকারের কাছে পাঠানোর জন্য নয়টি সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো:
১. ভারতের প্রশাসনের তদন্তের জন্য একটি রাজকীয় সমিতি নিয়োগ করা।
২. ভারত সচিবের পরামর্শ সভা বিলোপ করা।
৩. কেন্দ্রীয় আইনসভায় নির্বাচিত জাতীয় সদস্যদের গ্রহণ করা।
৪. ভারতের সামরিক খাতে ব্যয় হ্রাস করা।
৫. উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য ভারতে ও ইংল্যান্ডে একযোগে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৮৫ সালে যে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় তা একদিনে বা একা কারো উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে মুখ্য কারণ ছিল সুদীর্ঘকাল থেকে ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও নির্যাতন। তাই শোষিত ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের চেপে থাকা ক্ষোভের চরম মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হলো একটি নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়াস। এরই ফলশ্রুতিতে ১৮৮৫ সালে গঠিত হয় সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।