অথবা, শিক্ষার স্তরসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষার স্তর ভিত্তিক পদ্ধতিসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষার ধাপগুলো আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: একটি জাতির উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মানবতা বিকাশ, জনমুখী উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদান, নীতিবান ও কুসংস্কারমুক্ত জাতি গঠন, অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়া, সচেতনতা বোধ জাগ্রত করা, সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানব সম্পদের উন্নয়ন শিক্ষার হার বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ প্রদান প্রভৃতি সকল দিকের নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষা নীতিতে।
শিক্ষার স্তরভিত্তিক কতিপয় কৌশলঃ নিম্নে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষার স্তর ভিত্তিক কতিপয় কৌশল
তুলে ধরা হলো:
প্রাথমিক শিক্ষাঃ প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা বর্তমান সময়ের বাস্তবতা ও চাহিদার আলোকে পুনর্বিন্যাস করা হবে। এতে স্থানীয় জন সাধারণকে সম্পৃক্ত করা যাবে।
কৌশল:
১. প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক বিকেন্দ্রীকরণ করা যাবে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রয়োজনে আরও ক্ষমতা দিয়ে কার্যকর করে তোলা হবে। নারী অভিভাবকের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে শিক্ষক অভিভাবক কমিটি গঠন করে এবং এটিকে অধিক কার্যকর করে অভিভাবকদের বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।
২. শিক্ষার মনোন্নয়নের জন্য যথাযথ মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। তাই শিক্ষক নির্বাচন কমিশন এর মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
৩. শিক্ষকদের বাৎসরিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন প্রধান শিক্ষক করবেন। প্রধান শিক্ষকের কাজের মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে জোরদার করা হবে।
৪. বিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষণ আরও কার্যকর করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা কাঠামোর উন্নয়ন সাধন করা হবে।
মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষাঃ আধুনিক যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রশাসন ছাড়া শিক্ষার সফল প্রসার ও মনোন্নয়ন সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা প্রশাগণকে প্রয়োজনানুসারে সংস্কার করা হবে। স্থানীয় জনসাধারণকেই এই প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভাবে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে।
কৌশল:
১. মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনে ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তৃত্বকে বিভাগীয়। জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। জেলা শিক্ষা অফিসারের পদটি জেলার অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে সুসামঞ্জস্য করা হবে।
২. বিদ্যালয় কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রয়োজনে অধিকতর ক্ষমতা দিয়ে আরও জোরদার করা হবে। অভিভাবক, স্থায়ী শিক্ষা অনুরাগী ও নেতৃত্ববৃন্দ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থা করা হবে।
৩. একাডেমিক তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণ করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের সংখ্যানুপাতে বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি করতে হবে যেন একটি বিদ্যালয় প্রতিমাসে অন্তত একবার বিস্তারিতভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়।
৪. অধিদপ্তরের বর্তমান EMIS কম্পিউটার সেলকে সম্প্রসারণ করে আধুনিকীরণ করা হবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য এর কম্পিউটার সেলকে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে।
৫. স্কুলম্যাপিং কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে একাডেমিক স্বীকৃত এবং এমপি ও ভুক্তির অনুমোদন প্রদান করা হবে।
৬. সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাদের শিক্ষক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূরীকরণের স্বার্থে
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি এবং শিক্ষকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণগত যোগ্যতার আলোকে মূল বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকার থেকে প্রদান করা হবে।
৭. বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষদের জন্য প্রতিষ্ঠিত কল্যাণ ট্রাস্ট, চিকিৎসা ব্যয়, অকাল মৃত্যুতে পরিবারের একাকালীন সাহায্য করা, পেনশন সুবিধা প্রদান ইত্যাদি ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
৮. যেসব উপজেলায় সরকারি মাধ্যমক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ নাই সেসব উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৯. যেসব উপজেলায় সরকারি মধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ নাই সেসব উপজেলায় ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১০. শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যানুপাতে সরকারি স্কুল, কলেজ, টি, টি কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জেলা শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক অফিস ও অধিদপ্তরে প্রয়োজনানুসারে কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা প্রদানঃ
১. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন ও নেতৃত্ব প্রদান করবে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান যাতে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসনে স্থিত হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকাণ্ড, কর্মপরিধি, পরীক্ষা ও পর্যালোচনা এবং শিক্ষার মান সংক্রান্ত বিষয়াদি পরিবীক্ষণের দয়িত্বে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ক্ষেত্র বিশেষে অন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন বোধে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্ববিদ্যানয় বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করবে যাতে অতিরিক্ত প্রশাসনিক দায়িত্বভার শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
১. অনুমোদনকারী ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব ও ব্যাপকতা বিশাল হওয়ায় এর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রত্যেক বিভাগয় শহরে কেন্দ্র স্থাপন করে এর কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি প্রতীয়মান হওয়ার দ্রুত এর কাজ সম্পন্ন করা হয়ে।
২. গাজীপুরে অবস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস এর দিক-নির্দেশনা ও তদারকিতে বিভাগীয় কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হবে। এই কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস ঢাকা বিভাগীয় কেন্দ্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শিক্ষারস্তরকে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে বাস্তবায়ন করার প্রতি দিক নির্দেশনা প্রদন করেছে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে।