তুমি কী মনে কর লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বীজ নিহিত ছিল?

 

অথবা, লাহোর প্রস্তাব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত রচনা করেছিল-আলোচনা কর।

উত্তর। ভূমিকা: লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক নতুন অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে। স্বতন্ত্র আবাসভূমি ও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় তারা ব্যাপকভাবে আশাবাদী হয়ে উঠে। মূলত লাহোর প্রস্তাবের মাঝেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল কি না লাহোর প্রস্তাবের মাঝে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বীজ নিহিত ছিল কি না সে ব্যাপারে নিচে আলোকপাত করা হলো:

১. লাহোর প্রস্তাব মুসলমানদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ও দিকনির্দেশনা এনে দেয়। অতি দ্রুত পাকিস্তান আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটে।

২. লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে অব্যাহত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষের বিভক্তি ঘটে। জন্ম হয় পাকিস্তান নামক মুসলিম রাষ্ট্রটির।

৩. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। এ জোটের একুশ দফা নির্বাচনী ইশতেহারের ১৭নং দফাটি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা।

৪. ১৯৬২ সালে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে। তিনি এ বলেও পশ্চিম পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হলে পাকিস্তানের ভাঙন অবশ্যম্ভাবী।

৫. ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর এক কনভেনশনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান লাহোর প্রস্তাবের আলোকে ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয়দফার প্রথম দফাই ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা। পরবর্তীতে ছয়দফাকে ভিত্তি করে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্ত াবের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। কেননা বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রাম এ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির আবির্ভাব ঘটেছিল।