অথবা, তুরস্ক ও খিলাফতের প্রতি ভারতের মুসলমানদের কিরূপ শ্রদ্ধা ছিল তা সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: ইসলামের ইতিহাসে খিলাফত একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ড. হুসাইনীর মতে, এ প্রতিষ্ঠানের অধিকারী খলিফা ছিলেন রাষ্ট্রের এবং ধর্মের সর্বপ্রধান। উল্লেখ্য যে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (স) তিরোধানের পর আবু বকর সিদ্দিকের নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামে খিলাফত নামক প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভব ঘটে। অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাগণ উমাইয়া, আব্বাসীয় ও মামলুক শাসকগণ এবং ১৯২৪ সালে মোস্তফা কামাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তি ঘোষণা না করা পর্যন্ত অটোম্যান সুলতান খলিফা হিসেবে স্বীকৃত হতেন।
তুরস্ক ও খিলাফতের প্রতি ভারতীয়দের শ্রদ্ধা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বেশিরভাগ মুসলমান তুরস্কের সুলতানকে ইসলামের রক্ষক ও বিশ্ববাসীদের প্রভু হিসেবে স্বীকৃতি জানায়। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং তুরস্কের খিলাফত ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করে। এ সময় ভারতবর্ষ ব্রিটিশরাজ কর্তৃক শাসিত হয়। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করে এবং ব্রিটিশ জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে ব্রিটিশরাজ ভারতবর্ষের জনগণের সাহায্য সহানুভূতি কামনা করে এবং সক্রিয়ভাবে ভারতীয় জনগণতে ব্রিটেনের পক্ষে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানায়। সুযোগ বুঝে ভারতীয় মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের উপর নিম্নোক্ত শর্তগুলো চাপিয়ে দেয় এবং দাবি করে যে, শর্তগুলো পালন করার নিশ্চয়তা পেলেই কেবল মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে যুদ্ধের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। কারণ, মুসলমানরা বুঝতে পেরেছিলেন যে যুদ্ধের তুরস্কের পতনের অর্থই হবে খিলাফতের পতন। শর্তগুলো নিম্নরূপ-
১. যুদ্ধ শেষে তুরস্ক পরাজিত হলে তুরস্কের সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে।
২. তুরস্কের খিলাফত ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
৩. তুরস্কের খলিফার প্রতি কোনোরূপ অমর্যাদাকর ব্যবহার করা যাবে না।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯১৯ সালের আইনের প্রতিবাদে ভারতীদের যে অসহযোগ আন্দোলন এবং খিলাফত কমিটির নেতৃত্বে যে অসহযোগ আন্দোলন তা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা একপর্যায়ে দুটি আন্দোলন জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে এসে কর্মসূচি নির্ধারণ করেন তা ইতিহাসে তুলনাহীন। গুরুত্বের কাল বিচারে এ আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী ছিল। তবে সফল না হওয়ায় কেবল অযথা হতাহত হয় মাত্র।