অথবা, আল-গাজালির প্রধান অভিযোগগুলো সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, দার্শনিকদের বিরুদ্ধে আল গাজালির প্রধান অভিযোগসমূহ কী কী?
অথবা, দার্শনিকদের বিরুদ্ধে আল গাজালির প্রধান অভিযোগগুলো সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, আল-গাজালির প্রধান অভিযোগগুলো সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা: ইমাম আল-গাজালি ছিলেন কঠোর অধ্যবসায়ী এবং অসাধারণ মেধাবী। তিনি একাধারে
ধর্মতত্ত্ববিদ, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, কবি, সুফি সাধক ও সমাজসংস্কারক। তাঁর জীবনে মেধা ও সাধনা, তত্ত্ব ও অনুশীলন, বিশ্বাস ও যুক্তির এক অপূর্ব সুসমন্বয় ঘটেছিল। তাঁর মেধা ও মননের সম্পূর্ণ অংশই তিনি ব্যয় করেছিলেন সৎকাজে। ইমাম আল-গাজালি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি কেবল উপদেশ দেন নিঃ বরং নিজের জীবনে তিনি তা পালনও করেছেন।
দার্শনিকদের বিরুদ্ধে গাজালির অভিযোগসমূহ: ‘তাহাফুতুল ফালাসিফা’ গ্রন্থে ইমাম আল-গাজালি দার্শনিকদের যে সমালোচনা করেছেন, তাকে তিনি বিশটি সমস্যা আকারে আলোচনা করেছেন। তাঁর উক্ত গ্রন্থে তিনি বিশটি বিষয়ে দার্শনিকদের মতবাদ পর্যালোচনা করেছেন। তিনি এ বিশটি সমস্যাকে আলোচনা করে দেখেছেন যে, দার্শনিকদের মতবাদ এর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্রান্ত। অন্যদিকে এর মধ্যে কিছু মতবাদ রয়েছে, যা দার্শনিকদের মারাত্মক পদস্থলন ঘটিয়েছে।
ফালাসিফা সম্প্রদায়ের মুসলিম দার্শনিকদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রধান আক্রমণ ছিল। তাঁর মনোযোগ দার্শনিকদের কিছু মতবাদের দিকে বিশেষভাবে আকর্ষিত হয়। দার্শনিকদের মতবাদের মধ্যে তিনটি মতবাদের কথা তিনি তাঁর তাহাফুতুল ফালাসিফ্য গ্রন্থের পরিশিষ্টে উল্লেখ করেন এবং তিনি নিম্নোক্ত কারণে দার্শনিকদের কাফের বলে ঘোষণা করেন। তা হলো:
১. জগতের অনাদিত্ব স্বীকার করা।
২. আল্লাহর বিশেষ জ্ঞান নেই এমন মনে করা।
৩. দৈহিক পুনরুত্থানের বিষয়টা অস্বীকার করা।
ইমাম আল-গাজালির মতে, “নিম্নলিখিত তিনটি সমস্যায় তাহাদেরকে কাফির না বলিয়া উপায় নাই।”
ক. জগতের অনাদি হওয়া সমস্যা। তাদের এ বিষয়ে মত হলো যাবতীয় পদার্থ অনাদি ও অবিনশ্বর।
খ. তাদের ধারণা, আল্লাহতায়ালা সৃষ্ট প্রাণী কর্তৃক কৃতকার্য বা আংশিক নিয়মগুলো অবগত নন।
গ. দৈহিক পুনরুত্থানের অস্বীকৃতি।
দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম আল-গাজালি তাঁদের এসব মতবাদ তাঁর ‘তাহাফুতুল ফালাসিফা’ নামক গ্রন্থের যথাক্রমে প্রথম সমস্যা, একাদশ সমস্যা ও বিংশ সমস্যা শিরোনামে আলোচনা করেন। তিনি তিনটি মতবাদ সম্পর্কে তার উক্ত গ্রন্থের পরিশিষ্টে আরও যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেন তার সার সংক্ষেপ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ইসলামের মূলনীতির সাথে বা শরিয়তের সাথে এ মতবাদসমূহ মোটেই সংগতিপূর্ণ নয়।
২. বিশ্বাসী ব্যক্তি নবী রাসূলদের এগুলো মিথ্যাবাদীর পর্যায়ে ফেলে দেয়।
৩. গাজালির ধারণা দার্শনিকদের মত করে বলা যায়, নবী রাসূলগণ হয় নিজ থেকে এগুলো অর্থাৎ উপরিউক্ত মতবাদের বিরোধতা করেছেন, নতুবা মানুষকে বুঝানোর জন্য এমনটা করেছেন।
গাজালির মতে, ইসলামের মূলনীতি বা শরিয়ত অমান্য করা, নবী রাসূলের মিথ্যাবাদী ও রূপক কথা প্রচারকারীরূণে চিহ্নিত করা কোন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। মুসলমানদের কোন দলই এরূপ আকিদা পোষণ করে না।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আল-গাজালি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দার্শনিকদের কাফের বলেছেন। মূলত তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানপিপাসু সাধক পুরুষ। তিনি সুনিশ্চিত সত্য আবিষ্কারের জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অসাধারণ মেধাসম্পন্ন সত্যানুরাগী এ সাধক দার্শনিকদের মতবাদসমূহ পর্যালোচনা করে দেখলেন যে, তাঁদের অনেক মতবাদই সুনিশ্চিত বলে মনে করা যায় না। ফলে তিনি দার্শনিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং কাফের বলে আখ্যায়িত করেন। সুতরাং তাঁর মন্তব্যকে গুরুত্বহীন বলার অবকাশ নেই।