দাসপ্রথার ক্ষেত্রে এরিস্টটলের যুক্তি প্রসঙ্গে মতামত আলোচনা কর।

অথবা, এরিস্টটলের দাসপ্রথার সমালোচনাসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, সমালোচনাসহ এরিস্টটলের দাসপ্রথা আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: যুক্তি, বৃদ্ধি জ্ঞান, বিজ্ঞান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যুগে কোন যুক্তিতেই এরিস্টটলের দাসপ্রথা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। গণতন্ত্র আর সাম্যের মূল কথা হলো প্রতিটি ব্যক্তিকেই তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সমসুযোগ দিতে হবে।

দাসপ্রথার ক্ষেত্রে এরিস্টটলের যুক্তি প্রসঙ্গে আমার মতামত: দাসপ্রথার সমর্থনে এরিস্টটলের উপর্যুক্ত যুক্তিসমূহের সাথে আমি একমত নই। কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক: এরিস্টটল দাসপ্রথা সম্পর্কে যে মন্তব্য প্রদান করেছেন তা স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক। তিনি বলেছেন, দাসরা বুদ্ধিহীন। অথচ তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, দাসরা তাদের প্রভুদের বিচার উপলব্ধি করতে সক্ষম। একথা স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক। কেননা দাসরা যদি বিবেক বুদ্ধিহীন হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে প্রভুর বিচার বুদ্ধি উপলব্ধি করবে?

২. মানবতা বিরোধী: দাসপ্রথা একটি মানবতা বিরোধী প্রথা। শ্রেষ্ঠত্বের দোহাই দিয়ে অন্যের উপর প্রভুত্ব করা অন্যায় ও অমানবিক। দাসপ্রথা ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে ব্যক্তিত্বকে করে বিনাস। কাজেই এটা মানবতা বিরোধী।

৩. নীতিহীন: এরিস্টটলের দাসতত্ত্ব ন্যায়সঙ্গত ও যথার্থ যুক্তিপূর্ণ নয়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, মানুষকে দাসের মর্যাদায় অবনমিত করা নীতিহীন।

৪. অপ্রাসঙ্গিক: এরিস্টটল তাঁর দাসপ্রথার সমর্থনে যেসব যুক্তির অবতারণা করেছিলেন তা বর্তমান সমাজব্যবস্থায় অপ্রাসঙ্গিক। কেননা তিনি দাসদেরকে বুদ্ধি বিবেকহীন প্রাণী হিসেবে অভিহিত করেও তাদের হাতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পণ করার কথা বলেছেন যা অপ্রাসঙ্গিক।

৫. দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক: অধিকসংখ্যক দাসের উপস্থিতি দেশের জন্য ক্ষতিকারক। কারণ দাসদের কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক অধিকার না থাকায় তারা সে সম্পর্কে উদাসীন থাকে। এটা যে কোন দেশের জন্য ভীতিকর।

৬. পরিমাপে অসুবিধা: কোন ব্যক্তির বুদ্ধিসত্তা আছে কি না সেটা নির্ধারণ করার কোন মানদণ্ড এরিস্টটল উল্লেখ করেন নি। কাজেই যে দাস বলে পরিগণিত সে সত্যিকারের দাস নাও হতে পারে।

৭. ন্যায়সঙ্গত নয়: এরিস্টটল দাসদের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা ন্যায়সঙ্গত নয়। জন্মগতভাবে সবাই সমান।

৮. সমর্থনযোগ্য নয়: যেখানে আধুনিক সমাজে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও সাম্যের কথা প্রচার করা হয়, সেখানে এরিস্টটলের দাসপ্রথা আদৌ সমর্থন করা যায় না।

৯. অগণতান্ত্রিক: দাসপ্রথা আধুনিক গণতন্ত্রের পরিপন্থি। গণতন্ত্রে যেখানে সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে
সেখানে দাসপ্রথা মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

১০. দাস বিদ্রোহ: দাসদের সামাজিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা দেশের জন্য
ক্ষতিকর। প্রাচীন গ্রিসের অনেক রাষ্ট্রের পতনের কারণ দাস বিদ্রোহ।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বিশ্বের জনসংখ্যার যেখানে সিংহভাগ এখনো অশিক্ষিত এবং স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারছে না, সেখানে এরিস্টটলীয় যুগের আড়াই হাজার বছর পরেও এ যুগের মানুষ কতটুকু দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে তাঁর দাসপ্রথার বিপক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান থেকেও বলা যায়, দাসপ্রথা বর্তমানকালে কোথাও কোথাও কোন না কোনভাবে টিকে আছে; যার জন্য এ আধুনিক যুগেও বিস্মৃত হতে হয়।