অথবা, দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের কারণ ফলাফল সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ দাও।
অথবা, দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: ইংরেজ গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির আমলে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণমূলক যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয় তন্মধ্যে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ অন্যতম। শিখদের স্বাধীনচেতা মনোভাব ও বিদ্রোহাত্মক কার্যাবলির প্রেক্ষিতে ইংরেজরা যুদ্ধের অজুহাত খুঁজে পায়। ডালহৌসির অনমনীয় পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় ইঙ্গ– শিখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের ফলে পাঞ্জাবে ইংরেজ আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের কারণ: দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. প্রথম ইঙ্গ-শিখদের পরাজয়ের প্রতিশোধ স্পৃহা: প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা এবং পরাজয়ের গ্লানি শিখগণ ভুলতে পারেনি। প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধের জন্য শিখ সেনাবাহিনী উদগ্রীব ছিল। শিখদের পরাজয়ের গ্লানি মোছন এবং প্রতিশোধ স্পৃহার কারণে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
২. রাণি ঝিন্দলকে কারারুদ্ধকরণ: ইংরেজরা রাণি ঝিন্দলের কার্যাবলিতে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে কারারুদ্ধ করে। ফলে শিখদের ইংরেজ বিরোধী মানসিকতা তীব্র রূপ নেয়। তাছাড়া লাহোরের ইংরেজ রেসিডেন্ট হেনরি লরেন্সের নীতি ও আচরণ শিখদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
৩. মুলতানের আঞ্চলিক বিদ্রোহ: মুলতানের আঞ্চলিক ব্রিদ্রোহ শিখ জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে পরিণত হয়। এমনকি পেশোয়ার পুনরুদ্ধারের আশায় আফগানরাও শিখদের সঙ্গে যোগদান করে। ইংরেজরা শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইতিহাসে এই যুদ্ধ দ্বিতীয় শিখ যুদ্ধ নামে পরিচিত।
৪. মুলতানের শাসনকর্তার প্রতি ইংরেজদের নীতি: মূলতানের শাসনকর্তা ছিলেন দেওয়ান মুলরাজ। লাহোরের ইংরেজ রেসিডেন্ট মুলরাজকে তার দশ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে বললে ১৮৪৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। তখন সিং নামে জনৈক শিখকে মুলতানের শাসক নিযুক্ত করা হয়। নতুন শাসককে মুলতানে পৌছে দেওয়ার জন্য ড্যান্স এগলিউ ও এ্যান্ডারসন নামক দুজন ইংরেজ কর্মচারীকে লাহোরে পাঠান। কিন্তু পথিমধ্যে দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক এ দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় ইংরেজরা সন্দেহ করে যে, এ হত্যার পেছনে মূলরাজের হাত রয়েছে। তখন লাহোর দরবার মূলরাজকে দমন করার জন্য শের সিংহকে প্ররণ করেন। শের সিংহ মূলরাজের সঙ্গে হাত মেলান। ফলে ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।
যুদ্ধের ফলাফল: দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের পরাজয়ের ফলে পাঞ্জাবের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। বিজয় গর্বে ডালহৌসি কারও অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করেই পাঞ্জাব দখল করে নেন। রাণী ঝিন্দল ও দিলীপ সিংহকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। খালসা বাহিনী ভেঙ্গে দেওয়া হয়। পাঞ্জাব শাসনের জন্য একজন কমিশনার নিযুক্ত করা হয়। হেনরি লরেন্স প্রথম পাঞ্জাবের চিফ কমিশনার নিযুক্ত হন। লরেন্স পাঞ্জাবের নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করলে সেখানে এক নবযুগের সূচনা হয়। প্রায়ই ইংরেজরা পাঞ্জাবের জনগণের মন জয় করতে সমর্থ হয়। শিখরা ইংরেজদের অনুগত ভৃত্যে পরিণত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজদের রাজ্য সম্প্রসারণমূলক যুদ্ধগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে পাঞ্জাবে ইংরেজদের আধিপত্য সুদৃঢ় হয়। এর মাধ্যমে শিখদের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় এবং আফগানদের হুমকি থেকেও ইংরেজরা মুক্ত হয়।