অথবা, দ্বৈত শাসনের অর্থনৈতিক প্রভাব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, দ্বৈত শাসনের অর্থনৈতিক ফলাফল সম্পর্কে কী জান?
অথবা, দ্বৈত শাসনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয়বার গভর্নর হিসেবে বাংলায় এসে যে শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন তা দ্বৈতশাসন নামে পরিচিত। বাংলা তথা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে দেওয়ানি লাভ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভ মূলত দ্বৈতশাসনের সূচনা করে এবং এ সনদ প্রাপ্তি বাংলায় অর্থনৈতিক ও তার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের সনদ বলা যেতে পারে।
দ্বৈত শাসনের অর্থনৈতিক প্রভাব: বাংলার অর্থনৈতিক জীবনে দ্বৈতশাসনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. রেশম শিল্পের অবনতি: মুঘল আমলে রেশম শিল্প ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিন্তু দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার ফলে রেশম শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইংল্যান্ডের বেশি দামের রেশম শিল্পকে বাংলার প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বাংলায় কেনা সস্তা দামের মুর্শিদাবাদী রেশমের কাপড় ইংল্যান্ডে আমদানি নিষিদ্ধ করে। ফলে রেশম শিল্পের উৎপাদন কমে যায় এবং উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারমূল্য অস্বাভাভিকভাবে বেড়ে যায়।
২. ব্যবসা বাণিজ্যে ইংরেজ বণিকদের প্রভাব বৃদ্ধি: রবার্ট ক্লাইভের দ্বৈতশাসন প্রবর্তনের ফলে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ইংরেজদের হাতে চলে যেতে থাকে। ইংরেজ বণিকরা দস্তকের ব্যাপক অপব্যবহার চালালে দেশীয় বণিকরা ধীরে ধীরে বাণিজ্য থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
৩. তাঁতিদের দুরবস্থা: দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে রায়তদের দুর্দশা হয় বটে বরং তাঁতিদের অবস্থাও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। তাঁতিদের বলপূর্বক আগাম মূল্য নিতে বাধ্য করা – হতো। ফলে তাঁতিদের দুর্দশার সীমা ছিল না।
৪. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর: দ্বৈত শাসনের ফলে দেশের অর্থনৈতিক – অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বৈতশাসনের কূফল যে কি মারাত্মক হতে পারে এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। বাংলা ১১৭৬ এবং – ইংরেজি ১৭৭০ সালে বাংলায় সংগঠিত মন্বন্তর জনসংখ্যা – অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যুমুখে পতিত হয়। বাংলার কৃষি ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু এর সাথে কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচার ও জুলুম মিলিত হয়ে এক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। ১৭৭০ সালে অনাবৃষ্টির কারণে চালের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে বাংলায় এক চরম বিপর্যয় দেখা দেয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ছিল বাংলার জনসাধারণের জন্য চরম অভিশাপসরূপ। দ্বৈত শাসন নবাবকে ঠুটো জগন্নাথে পরিণত করে। নবাব পান – ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পায় দায়িত্বহীন ক্ষমতা। প্রকৃতপক্ষে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থাকে একটি কাল্পনিক ব্যবস্থা বলে অভিহিত করা যায়।