অথবা, দ্বৈত শাসনের ফলাফল সম্বন্ধে লিখ
অথবা, দ্বৈত শাসনের ফলাফল সম্পর্কে কী জান?
অথবা, দ্বৈত শাসনের ফলাফল কী ছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ক্লাইভের প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা এদেশবাসীর জন্য এক বিরাট অভিশাপ ছিল। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী নবাবের দায়িত্ব ছিল, কিন্তু কোনো ক্ষমতা ছিল না। অর্থের জন্য তাকে কোম্পানির দয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে প্রয়োজনের সময় ক্ষমতা ও অর্থের অভাবে নবাব কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন না। অন্যদিকে কোম্পানির ক্ষমতা ও অর্থের প্রয়োজন ছিল না। তাই দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার ফলে বাংলার জনসাধারণ চরম দুর্দশার মধ্যে নিপতিত হয়।
সায় দ্বৈত শাসনের ফলাফল: নিম্নে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার ফলাফল আলোচনা করা হলো:
১. রেজা খানের কঠোরতা: বাংলায় নায়েব-দেওয়ান রেজা খানের কুশাসন ও অর্থ লালসার ফলে বাঙালিদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত ছিল না। পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে দেশের সম্পদ হ্রাস পেতে থাকে, কিন্তু রাজস্বের হার প্রতি বছর বাড়তে থাকে। এ রাজস্ব সংগ্রহ করতে রেজা খানের উপর চাপ দেওয়া হয় এবং তিনি রাজস্ব সংগ্রহ করতে কঠোরতা অবলম্বন করেন।
২. কোম্পানির নিজস্ব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা: দেওয়ানী লাভের পর দেশের সমস্ত ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। তারা প্রায় ২০০ বছর এককভাবে এদেশে নিজস্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া বৈদেশিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলার জন্য নবাবকে কোম্পানির সাহায্যের উপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়।
৩. দুর্নীতির দৌরাত্ম: কোম্পানির কর্মচারীরা এদেশে নির্বিচারে ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক কেরী মন্তব্য করে বলেন যে, “দ্বৈত শাসনের ফলে বাংলায় অরাজকতা ও দুর্নীতি চরমভাবে আত্মপ্রকাশ করে।” এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা নবাবের লক্ষে সম্ভব ছিল না।
৪. শাসনের নামে কুশাসন: নিজামত ও কোম্পানির কর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রতি অধিকতর মনোযোগী হওয়ায় রাজ্য শাসনের নামে কুশাসন পূর্বের ন্যায় চলতে থাকে।
৫. বাংলার জনজীবনে অরাজকতা: লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ছিল এদেশবাসীর জন্য এক চরম অভিশাপ। এ ব্যবস্থায় নবাব ও কোম্পানির উপর স্ব স্ব দায়িত্ব অর্পিত হলেও প্রকৃতপক্ষে কারো কোনো ক্ষমতা ছিল না। ফলে বাংলার শাসন ব্যবস্থায় এক চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং জনগণের দুঃখ দুর্দশা চরমে পৌছে।
৬. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর: কোম্পানির কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে এদেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। ১৭৭০ সালে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এটা ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত। এক তৃতীয়াংশ লোক এ দুর্ভীক্ষে মারা যায়। কলকাতা কাউন্সিল বিলাতের পোর্ট অব ডিরেকটরসকে লিখেছেন যে, দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করা দুঃসাধ্য।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ছিল বাংলার জনসাধারণের জন্য চরম অভিশাপ। এ শাসনের ফলে নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পায় দায়িত্বহীন ক্ষমতা। দ্বৈত শাসন সম্পর্কে মহাজন বলেন, “দ্বৈত শাসনব্যবস্থা সাময়িক, ১৭৬৫ সালে ইংরেজগণ যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি ছিল একটি তাৎক্ষণিক চুক্তি।