অথবা, নীতি বিশ্লেষণ বলতে কি বুঝ? নীতি বিশ্লেষণের কৌশলগুলো বর্ণনা কর।
ভিত্তর: ভূমিকা: নীতি হলো কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য একটি দিক নির্দেশনা। কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়, নীতি এসব কর্মসূচি ও কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। নীতি বিশ্লেষণ একটি গবেষণালব্ধ বিষয়। নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সামাজিক নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। নীতি বিশ্লেষণ করে মূল্যয়ন ব্যবস্থা করা হয়। এই নীতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাজ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।
নীতি বিশ্লেষণঃ নীতি বিশ্লেষণ বলতে এমন কার্যক্রমকে বুঝায়, যা সামাজিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পর্যায় সমূহ বর্ণনা করে।
সমাজকর্ম অভিধানের মতে, “নীতি বিশ্লেষণ হলো একটি নীতি ও প্রক্রিয়ার সংগঠিত মূল্যায়ন যাতে এটি প্রণীত হয়।”
সুতরাং বলা যায়, নীতি বিশ্লেষণ হলো সামাজিক নীতি সম্পর্কিত তথ্যনির্ভর জ্ঞান, নীতি বিশ্লেষণ করে সামাজিক নীতি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। অসুবিধা হলো রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা থাকে।
নীতি বিশ্লেষণের পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. চাহিদা নিরূপণ: জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা নিরূপণের লক্ষ্যে নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। নীতি প্রণয়নের পূর্বে নীতি বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নীতি বিশ্লেষকরা সমস্যার প্রকৃতি, কারণ, পরিধি, ব্যাপকতা যাচাই-বাছাই করে থাকেন। তারা নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করেন। এই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন দলিল, জরিপ কার্য পরিচালনা করে থাকেন।
২. খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণঃ এই বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে লাভ ব্যয়ের হিসাবকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক নীতির মূল্যায়ন করা হয়। এখানে সামাজিক নীতি সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্যই হলো ব্যয়ের চেয়ে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধিকরা তাই খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. খরচ-ফলাফল বিশ্লেষণঃ এখানে ফলাফলের আলোকে সকল নীতির খরচ দেখানো হয়ে থাকে। অর্থের মাপকাঠিতে নীতির মূল্যায়ন করা হয়। এখানে সামাজিক নীতি সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। অর্থের মাপকাঠিতে নীতির মূল্যায়ন করা হয় না। বরং কিছু সুবিধার আলোকে ব্যয় বিবেচিত হয়ে থাকে।
৪. ফলাফল সমীক্ষাঃ এখানে ফলাফল বিবেচনা করতে ব্যয় বা আর্থিক সুবিধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় না। এখানে বিভিন্ন নীতির ফলাফলের মধ্যে তুলনা করা হয়ে থাকে। তাই ফলাফল সমীক্ষা বলতে লাভের কথা বিবেচনা না করে ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নীতি বিশ্লেষণ করাকে বুঝায়।
৫. ঘটনা অনুধ্যানঃ ঘটনা অনুধ্যানের মাধ্যমে নীতি সম্পর্কে প্রযোজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ঘটনা অনুধ্যানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। তাই ঘটনা অনুধ্যান নীতি বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
৬. ম্যাটা বিশ্লেষণঃ এখানে নতুন তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর না দিয়ে গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে নীতির বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এটি মূলতঃ একটি পরোক্ষ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়, ম্যাটা বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নতুন তথ্যের চেয়ে সংগৃহীত ফলাফল বেশি কার্যকর বলে ধরে নেয়া হয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নীতি বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলো নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখে নীতি মূলতঃ কোনো ক্ষেত্রের কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশক। কোনো কর্ম কিভাবে সম্পাদন করতে হবে বা সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কি ধরনের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, নীতি তার সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।